বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: পুরনো সম্পর্ক মেরামত করে ফের শক্তি বৃদ্ধির ছক তেলেগু দেশম সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নায়ডু। ছবছর পর ফের নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের হাত ধরতে উদ্যোগী অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার রাতে দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরের ‘চাণক্য’ শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এনডিএতে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে সূত্রের খবর। ১৮ সালে অন্ধ্রকে বিশেষ মর্যাদার দাবিতে এনডিএ ছাড়ে তেলেগু দেশম পার্টি। চন্দ্রবাবু ফের গেরুয়া শিবিরে ফিরলে চাপে পড়বেন বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি। সেক্ষেত্রে জগনমোহন কী কৌশল নেন সেটাই এখন তেলেগু রাজ্যের রাজনীতিতে লাখ টাকার প্রশ্ন।
অন্ধ্রপ্রদেশে এবারও লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে। সেই ভোটের আগে দক্ষিণের ওই রাজ্যে কি বন্ধু বদল করতে চলেছে বিজেপি? তেলুগু দেশম পার্টির প্রধান অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার বৈঠক ঘিরে এই বিষয়ে জোর শোরগোল শুরু হয়েছে। চন্দ্রবাবু বুধবার দুপুরে দিল্লি আসেন। অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী জগমোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র শরিক নয়। তবে তারা বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। ওডিশার নবীন পট্টনায়েকের মতো জগনও কোনও জোটেই নেই। তবে নানা সময়ে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থেকেছে তাঁর দল।
অন্যদিকে, চন্দ্রবাবু ছিলেন এনডিএ-এর অন্যতম স্থপতি এবং ২০১৮ পর্যন্ত জোটের আহ্বায়ক। তিনি রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে আগ্রহী। সম্প্রতি দুর্নীতির মামলায় তাঁকে জেলে ঢোকায় জগন সরকার। জামিনে মুক্তি পেতে চন্দ্রবাবু প্রথমেই গিয়েছিলেন অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা হলেও কথা হয়নি। রামমন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা বেশ কিছু ছবি টুইট করেন। সূত্রের খবর, তেলেগু নেতা অনেক দিন ধরেই অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন। একবার বৈঠকও করেছেন বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে। পদ্ম শিবিরও দক্ষিণ বিজয়ে শরিকের সন্ধানে আছে। কর্নাটকে তারা জনতা দল সেকুলারদের সঙ্গে জোট করেছে। কিন্তু কেরল, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রে কোনও দলকে বন্ধু হিসাবে পায়নি। তেলেগু দশম পুরনো সঙ্গী। তাই চন্দ্রবাবুকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরে ভাবনাচিন্তা চলছিল বলে আগেই জানা যায়।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিলেন চন্দ্রবাবু। কিন্তু অন্ধ্রের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে ২০১৮ সালে এনডিএ ছাড়ে টিডিপি। ২০১৯-এর লোকসভা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে একাই লড়াই করে। সেই ভোটে জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসের কাছে হেরে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি হারান চন্দ্রবাবু। সে বার ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্ধ্রে গিয়ে চন্দ্রবাবুকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছিলেন। তার পর থেকে ঘোষিতভাবে বিজেপির সঙ্গে জোট ছিল না টিডিপির। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয় ২০২২ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবরের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারের পুরভোট থেকে। সেখানে দুই দল জোট বেঁধে লড়াই করে কংগ্রেস-ডিএমকে জোটকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। তার পরেই আবার এনডিএ-তে ফেরার রাস্তা তৈরি হয়। অন্ধ্র তথা কেন্দ্রীয় স্তরে জোটের সলতে পাকানোর শুরুটা অবশ্য ২০২৩-এর মে মাসে। ওই মাসের ‘মন কি বাত’-এ প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখে উঠে এসেছিল টিডিপি প্রতিষ্ঠাতা এনটি রাম রাওয়ের (এনটিআর) নাম। চন্দ্রবাবুর প্রয়াত শ্বশুর এনটিআর তিনটি মেয়াদে সাত বছর অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.