কলহার মুখোপাধ্যায়: উৎসবের মরশুমের মাঝেই শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়ম বদল করল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থার তরফে প্রকাশ করা হয়েছে সংশোধনী গেজেট নোটিফিকেশন। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (NCTE) এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডিএলএড কোর্সের সঙ্গেই উচ্চপর্যায়ের দুটি কোর্সকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এর আগে স্নাতক পাশ ও ডিএলএড কোর্স করলেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ানোর যোগ্যতা পেতেন শিক্ষকরা। কিন্তু নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্নাতকে ৫০% নম্বর–সহ বিএড ডিগ্রি হলে তবেই প্রাইমারি টেট (Primary TET) পরীক্ষায় বসতে পারবেন আবেদনকারীরা। এছাড়া ৩ বছরের ইন্ট্রিগ্রেটেড বি.এড-এম.এড প্রশিক্ষণ থাকলেও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে, শিক্ষক হিসেবে যোগদানকারীদেরকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার উপর ছ’মাসের একটি ব্রিজ কোর্স করতে হবে। শিক্ষক হিসেবে স্কুলে যোগ দেওয়ার দু’বছরের মধ্যে এই কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
ইতিপূর্বে ৫০% নম্বর নিয়ে স্নাতক এবং ব্যাচেলর অফ এডুকেশন (B.Ed) করা চাকরিপ্রার্থীরা এতদিন প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হতে পারতেন। সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম ৫৫% নম্বর বা সমমানের গ্রেড এবং তিন বছরের ইন্টিগ্রেটেড বিএড, এমএড করলেও প্রাথমিক শিক্ষকপদে আবেদন করা যাবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আরও জানা গিয়েছে, কমপক্ষে ৫০% নম্বর-সহ স্নাতক এবং ১ বছরের স্পেশ্যাল বিএড এবং স্নাতকোত্তর ন্যূনতম ৫৫% নম্বর বা সমমানের গ্রেড এবং তিন বছরের ইনট্রিগেটেড বিএড-এমএড করলেই কেউ প্রাইমারি টেট বসার যোগ্যতামান অর্জন করবেন।
এর আগে এই নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে দু’বার সংশোধনী প্রকাশ করেছিল কেন্দ্র। ২০১৮–এর বিজ্ঞপ্তির সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আগের যোগ্যতামান ছাড়াও কেউ যদি স্নাতক স্তরে নূন্যতম ৫০% নম্বর পান ও বি.এড. ডিগ্রিধারী হন, তাহলে তিনিও এই স্তরের শিক্ষকতার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, কিন্তু তাঁকে চাকরি পাবার দু’বছরের মধ্যে ছয় মাসের এলিমেন্টারি এডুকেশন এ ব্রিজ কোর্স করে নিতে হবে। এরপর ২০১৯–এর সংশোধনীতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির জন্য বলা হয়, ন্যূনতম পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের সঙ্গে বি.এড ডিগ্রি থাকতে হবে। যেটা বদলে ২০২১–এর সাম্প্রতিক সংশোধনীতে এসে যেটা বলা হল, স্নাতকোত্তরে নূন্যতম ৫৫% নম্বর ও তিন বছরের ইন্টিগ্রেটেড বি.এড. এম.এড কোর্স করা থাকলে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষকতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং নবম – দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা বা শারীরশিক্ষার শিক্ষক হিসেবে যোগ্যতামান অর্জন করতে পারবেন।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষামহল। কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যাণ্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যাণ্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেছেন “এই বিজ্ঞপ্তিকে স্বাগত। এর ফলে আরও বেশি সংখ্যক প্রার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসবার সুযোগ মিলবে।” অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গরাই বলছেন, “সিদ্ধান্ত স্বাগত। চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে। তিন বছরের ইন্টিগ্রেটেড বিএড এম এড কোর্সের জন্য সারা দেশে পরিকাঠামা বৃদ্ধি করতে করতে হবে।” চাকরিপ্রার্থী সংগঠনের নেতৃত্ব সুশান্ত ঘোষের মতে,“এনসিটিই–র নিয়ম সংশোধনে বেশ কিছু সংশয় রয়েছে। সেই তিন বছরের ইন্টিগ্রেটেড বিএড, এমএড কোর্স এখনও সব রাজ্যে এবং এ রাজ্যেও চালু হয়নি। এ শুধু নিয়ম পরিবর্তন করার খেলা। নিয়ম মেনে প্রতি বছর টেট পরীক্ষা ও নিয়োগ হলে প্রার্থীরা বেশি উপকৃত হবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.