দ্বিতীয় মোদি সরকারের প্রথম বছরপূর্তি হয়েছে আজকে। গত এক বছরের সাফল্য নিয়ে কলম ধরলেন নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও দেশের রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।
দ্বিতীয় দফার মোদি সরকার আজ, ৩০ মে এক বছর পূর্ণ করছে। এই এক বছরে আমাদের দেশ বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে ভাগ করার সঙ্গে সঙ্গে ৩৭০ ধারা বাতিল, ঐতিহাসিক ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’ প্রণয়ন এবং অতি সম্প্রতি অভূতপূর্ব কোভিড-১৯ মহামার মোকাবিলায় সরকার দৃঢ়সংকল্প এবং কৃতিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিহত করা এবং মোকাবিলায় ভারতের প্রয়াস বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এই রোগের সংক্রমণ, মৃত্যুর হার এবং অন্যান্য সূচক বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই মহামারির জেরে অর্থনীতির উপর যে প্রভাব পড়েছে, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার একটি সুস্থায়ী, প্রত্যাশিত আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে এসেছে। এই আর্থিক প্যাকেজের পরিমাণ ২০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
২০ লক্ষ কোটি টাকার এই প্যাকেজটি দরিদ্রদের ত্রাণ সরবরাহে সাহায্য করবে, বিনিয়োগের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করবে, ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে এবং প্রতিযোগিতায় সক্ষম হয়ে ওঠার জন্য পরিকাঠামো গঠনে সাহায্য করবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ মন্ত্রের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকাই প্রতিফলিত করে, যার ফলে এক শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী এবং স্বনির্ভর ভারত গড়ে উঠবে। আমাদের ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বলতে হয়, বিশ্ব এক বৃহৎ পরিবারের মতো। ভারত কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১২০টিরও বেশি দেশকে নিঃশর্তভাবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-সহ চিকিৎসার নানা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে ৪৩টি দেশ এটি অনুদান হিসেবে পেয়েছে। গত এক বছরে ভারত সব ক্ষেত্রেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ভারতীয় রেলের জন্য, সুরক্ষার বিচারে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষটি ছিল সেরা। দুর্ঘটনার কারণে কোনও যাত্রীর মৃত্যু হয়নি। এর সঙ্গে সমস্ত রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিং বাদ দেওয়ার পর এ বছর রেকর্ড সংখ্যক, অর্থাৎ ১ হাজার ২৭৪টি মানববিহীন লেভেল ক্রসিং সারানো হয়েছে। যা, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের তুলনায় ৬৩১টি বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ২ হাজার ২২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে নতুন রেলপথ চালু করা, ডবল লাইন এবং গেজ পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যেখানে প্রতি বছর ১ হাজার ৫২০ কিলোমিটার করে কাজ হয়েছে। সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে কাজের পরিমাণ বার্ষিক গড়ের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। গত বছরের তুলনায় ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। ভারতীয় রেলকে যথাযথভাবেই ‘ভারতের লাইফলাইন’ বলা হয়। লকডাউনের মধ্যেও এই সুনাম রেল বজায় রেখে চলেছে। ভারতীয় রেল খাদ্যশস্য, কয়লা, লবণ, চিনি, দুধ, ভোজ্য তেলের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টায় সরবরাহ সুনিশ্চিত করেছে। ভারতীয় রেল ৩ হাজার ৭০৫টি ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন চালিয়েছে। ৫০ লক্ষেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিককে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। রেল এ পর্যন্ত বিনামূল্যে ৭৫ লক্ষেরও বেশি প্যাকেট খাবার পরিযায়ী শ্রমিকদের বিতরণ করেছে।
এর পাশাপাশি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় ‘পিপিই’, ‘স্যানিটাইজার’ এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মুখবন্ধনী অর্থাৎ ‘ফেস শিল্ড’ প্রস্তুত হয়েছে। দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি রফতানি উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে। ভারত রফতানি বৃদ্ধিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের সঙ্গে সমস্ত সমস্যার সমাধান করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বার্তালাপ শুরু করার প্রয়াস চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ‘আরসিইপি’ আলোচনায় ভারতের স্বার্থ নিয়ে আপস করতে অস্বীকার করেছেন। অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু করার ক্ষেত্রে সময়সীমা ৩৩ দিনের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানিতে অতিরিক্ত নির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যে ৮৯টি সামগ্রীর উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ১৩টি সামগ্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের কথা মাথায় রেখে এই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের সমাজের সঙ্গে গভীর সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক এবং অর্থনৈতিক যোগ রয়েছে ধূপকাঠির। এই ধূপকাঠির আমদানি সীমিত করা হয়েছে। এই ছোট পদক্ষেপ লক্ষ লক্ষ দরিদ্র ধূপকাঠি নির্মাতার, বিশেষত মহিলাদের জীবন-জীবিকা সুনিশ্চিত করেছে।
ভারত বিশ্বব্যাপী একটি নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। লক্ষণীয় যে, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ১৮.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্ব ব্যাংকের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর তালিকায় ভারত ১৪ ধাপ এগিয়ে ৬৩তম স্থানে পৌঁছেছে। বিনিয়োগের সুবিধার্থে কয়লাখনির কাজকর্ম (বিক্রয়—সহ) ও চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনার আওতায় ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় সংস্থানগুলির গ্রহণ / অধিগ্রহণে সুযোগ-সুবিধার প্রতিবন্ধকতায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতির সংশোধন করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংকট আমাদের দেখিয়েছে যে ব্যবসায়ীরাও সামনের সারির যোদ্ধা। আমাদের সরকারের দর্শন: ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে সবসময় সহায়তা করা। এজন্য একটি ‘জাতীয় ব্যবসায়ী কল্যাণ পর্ষদ’ গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও কর সংস্কারের পাশাপাশি একটি ‘জাতীয় স্টার্ট-আপ উপদেষ্টা পর্ষদ’ গঠনের ঘোষণা—সহ স্টার্ট-আপগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য এই বছরে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ের জন্য কৌশল হিসাবে আমরা ১২টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছি। সহজ ধারণা এবং নীতিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে রফতানির অংশীদার বাড়ানো এবং আমাদের বর্তমান শক্তি ও অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাকে ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছে এই চিন্তাভাবনাগুলি। আসবাবপত্র, এয়ার কন্ডিশনার, চর্মশিল্প এবং জুতো তৈরি। এই তিন ক্ষেত্রের কাজ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে সক্রিয় কাজ চলছে।
‘বীর সাভারকর’, যিনি ছিলেন সাহসী, দেশপ্রেমিক; যিনি শক্তিশালী এবং স্বনির্ভর ভারতের প্রতি দায়বদ্ধতার সমার্থক ছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে, ‘প্রস্তুতিতে ধৈর্যশীলতা কিন্তু কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সাহসিকতা– এটিই নীতিবাক্য হওয়া উচিত সংকটের মুহূর্তে।’ এই বাণী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় ও শান্ত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সংকট মোকাবিলার দক্ষতায় ধরা পড়েছে। তাঁর এই ভূমিকা প্রকৃত একজন বিশ্বনেতার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাহসিকতার দিকটিই তুলে ধরে।
(মতামত একান্ত ব্যক্তিগত)
লেখক রেল, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.