দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংসদকে আশ্বস্ত করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বুধবার রাজ্যসভায় তিনি বলেন, “আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে ঠিকই, কিন্তু মন্দা নয়।” অর্থনীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী যখন বক্তব্য রাখছেন তখন তা শুনতে শুনতেই ঝিমুনি ধরেছিল মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডের। মোদি সরকারের নতুন কর্মদক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রী। যাঁর কাঁধে দেশের তরুণদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির উপযোগী করে তোলার দায়িত্ব, তিনিই কিনা গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে ঘুমের দেশে চলে গেলেন। তা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, মোদি জমানায় চাকরির সুযোগ কমছে। ফলে কাজে উৎসাহ হারিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, আগের দিনই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, সরকার সমস্যার কথা স্বীকার করতে না চাইলে সমাধান খোঁজা কীভাবে সম্ভব হবে! তারপরেই নির্মলার এদিনের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বাজেট অধিবেশনের পর থেকে শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একাধিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন। এবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়েও তিনি বুঝিয়ে দিলেন, সরকার এ ব্যাপারে চুপ করে বসে নেই, বরং সমাধানে সচেষ্টই। অর্থমন্ত্রী যখন একথা বলছেন তখনই তাঁর পিছনের সারিতে বসা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঝিমিয়ে পড়ার দৃশ্য রাজ্যসভা টিভি মারফত সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। তাই দেখে অন্য বিজেপি সাংসদরা ঠেলে তুলে দেন মহেন্দ্রনাথকে।
এদিন রাজ্যসভায় দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বলেন, “পরপর আটটি ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে।” সম্মিলিতভাবে বিরোধীরা দাবি করে, দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সেই সূত্রেই জবাবি ভাষণে সীতারমণ জানান, মন্দা নয়। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার শ্লথ। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “কোনও মন্দা নেই এবং কোনও মন্দা হবেও না।” তাঁর বক্তব্য, ৫ জুলাই বাজেট পেশের পর সরকার আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে ৩২টি পদক্ষেপ করেছে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে পরপর দু’বার ব্যালান্স শিটের সংকটের জেরেই অর্থনীতি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে সরকারের নয়া দেউলিয়া আইন পরিস্থিতি অনেকটা বদলে দিয়েছে। সীতারমণ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ব্যাংকিং ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে ৭০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। তিনি কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
নির্মলা এদিন দেশের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য আগের কংগ্রেস নেতৃত্বের ইউপিএ সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি তথ্য দিয়ে বলেন, মোদি সরকারের আমলে অর্থনীতির অবস্থা অনেক ভাল। পাঁচ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার কমেছে। এফডিআই বেড়েছে। জিএসটি ও আয়কর আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। সময় হট্টগোল শুরু করে দেয় বিরোধীরা। তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না মন্ত্রী, এই অভিযোগে রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা। উল্লেখ্য, রাজ্যগুলিকে জিএসটির ভাগ দিচ্ছে না সরকার এবং অর্থনীতি সংক্রান্ত আরও বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছিল বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এদিন জিএসটি-সহ আরও কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেন্দ্র সরকারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.