ছবি: প্রতীকী
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: একাধিকবার শুক্রাণু বা ডিম্বাণু দান করলে ভবিষ্যতে সামাজিক সমস্যা হতে পারে। দাতার শুক্রাণু বা ডিম্বাণু থেকে একাধিক সন্তানের জন্ম হলে তাঁদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকতে পারে। অন্তত এমনটাই আশঙ্কা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। আর সেই কারণেই কৃত্রিম প্রজননে বড়রকমের বদল আনা হয়েছে।
‘অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (রেগুলেশন) রুলস ২০২২’-এ ইতিমধ্যেই গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৯০ পাতার প্রস্তাবে একদিকে যেমন কৃত্রিম প্রজননকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তেমনই সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে একজন সক্ষম পুরুষ বা মহিলা জীবনে একবারই শুক্রাণু বা ডিম্বাণু দান করতে পারবেন।
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে আর্ট ক্লিনিক (Art Clinic) দু’রকমের। লেভেল ১ ও ২। প্রতিটি আর্ট ক্লিনিককে রেজিস্ট্রি করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন না হলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন অধিকর্তা, স্ত্রী ও পুরুষ রোগ বিশেষজ্ঞ এবং অ্যানাস্থেটিস্ট রাখতে হবে।
দম্পতি যদি রাজি থাকেন তবে মৃত্যুর পর তাঁদের শরীর থেকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করা যাবে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকরা। তাঁদের অভিমত, কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্যে মাত্র একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে। তাই এখনই কৃত্রিম প্রজননে সাফল্যের হার মেরেকেটে ১৫-২০ শতাংশ। এবার নতুন নিয়ম চালু হলে আগামী দিনে কৃত্রিম প্রজননে নিঃসন্তান দম্পতির জীবনে সন্তানসুখ কার্যত অধরাই থেকে যাবে। শুধু তাই নয়, ক্রমশ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর জোগানও কমবে।
প্রয়াত সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পর ডা. বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী ও ডা. সুর্দশন ঘোষদস্তিদার যৌথভাবে IVF (ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) নিয়ে কাজ শুরু করেন। ডা. সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের কথায়, “১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় টেস্টটিউব সন্তানের জন্ম হয়। তার পরেই ICMR আমাদের পরামর্শদদাতা হিসাবে কাজ করে। এতদিন যে নিয়মে কৃত্রিমগর্ভাধান ও সন্তানের জন্ম হচ্ছিল তা আমাদের তৈরি নিয়ম মেনে।” তাঁর কথা অনুযায়ী, নতুন নিয়মে শুক্রানু, ডিম্বানুর জোাগান কমবে।
আরেক বিশেষজ্ঞ ডা. রত্না চট্টোপাধ্যয়ের কথায়, “কৃত্রিমভাবে ডিম্বাণু সংগ্রহে অনেকগুলি ডিম্বাণু সংগ্রহ করতে হয়। ব্যবহার করতে হয় ওষুধ। এর ফলে ওই মহিলার শারীরিক সমস্যা হতেই পারে। তাই এই নিয়মের কথা বলা হয়েছে।” আবার সারোগেট মাদারকেও বিমার আওতায় আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিমার অর্থ বহন করবেন দম্পতি।
এ নিয়ে প্রতিটি রাজ্যকে যেমন একটি বোর্ড গঠন করতে বলা হয়েছে, ওই বোর্ডের অধিকার থাকবে যে কোনও সময়ে যে কোনও ব্যক্তিকে জেরা করার। আইনানুগ ব্যবস্থা নোওয়ার ICMR-এর উপদেষ্টা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার গবেষক অধ্যাপক সুজয় ঘোষের কথায়, “একশ্রেণির মানুষ এই বিজ্ঞানকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করছিল। সন্তান পেতে ইচ্ছুক দম্পতিরা মরিয়া হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়েছেন। এই আইন হয়তো এই প্রবণতা কমাতে সাহায্য করবে। শুক্রাণু ডিম্বাণুর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও কমবে। প্রতি ছ’মাস অন্তর বোর্ড পর্যালোচনা করবে।”
কেন্দ্রের নয়া নিয়ম
ক্লিনিকগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
সন্দেহ হলে জেরা করবে বোর্ড।
একজন পুরুষ বা মহিলা একবারই শুক্রাণু ও ডিম্বাণু দান করতে পারবেন।
ডিম্বাণুদাত্রী মহিলাকে বিমার আওতায় আনতে হবে।
সারোগেট মাদারও বিমার আওতায় আসবেন।
প্রতিটি ক্লিনিকে যন্ত্রপাতির বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে।
ছ’মাস অন্তর চিকিৎসার ফলাফল জানাতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.