ফাইল ফটো
বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: বাংলা ভাগ! সেই সঙ্গে বিহারও!
দুই রাজ্যের কিছু অংশ নিয়ে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের কাজ শুরু করল কেন্দ্র। তবে প্রকাশ্যে নয়। সূত্রের খবর, চুপিসারে বঙ্গভঙ্গের প্রাথমিক তোড়জোড় চালাচ্ছে দিল্লি। সর্বভারতীয় একটি দৈনিকে তথ্যটি ফাঁস হতেই তীব্র বিরোধিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল (TMC)। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) অভিযোগ, বিজেপি পরাজয় হজম করতে পারছে না বলেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে চক্রান্ত করে বঙ্গভঙ্গের কথা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
বাংলা ও বিহার, এই দুই রাজ্য এখন বস্তুতই বিজেপির কাছে কঠিন জমি। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারে নীতীশ কুমার-তেজস্বী যাদব জুটি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে মোদির অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দেওয়ার জন্য এই ত্রয়ীই যথেষ্ট। আর সেটা আঁচ করেই নয়া চাল চেলেছে গেরুয়া শিবির, অমিত শাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গোপনে শুরু করে দিয়েছে দুই রাজ্য ভেঙে নয়া কেন্দ্রশাসিত রাজ্য গঠনের প্রস্তুতি।
পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার দাবি তুলছিল পদ্ম শিবির। বিজেপির সাংসদ ও বিধায়করা হামেশা দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সওয়াল করে আসছিলেন। বারবার এই বিতর্ককে ঘিরে বিস্তর জলঘোলাও হয়েছে, সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। উলটোদিকে এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার জানিয়েছেন, কোনওভাবেই বাংলাকে ভাগ হতে দেবেন না। প্রয়োজনে প্রাণ দিয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করবেন। উদ্যোগের বিরোধিতা করে বামেরাও। অভিযোগ, এমতাবস্থায় রাজনৈতিকভাবে মানুষের সমর্থন নিয়ে বাংলা দখল অধরা থেকে যাবে বুঝেই অমিত শাহ (Amit Shah) ও জে পি নাড্ডারা (JP Nadda) অন্য কৌশলের ভাবনাচিন্তা করেন। নয়া গেমপ্ল্যানের ফলশ্রুতি, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এভাবে ঘুরপথে বঙ্গের একাংশ দখলের কাজ শুরু হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের ইঙ্গিত।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিহার সফরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বিহারের আদিবাসী অধ্যুষিত কিষানগঞ্জ-সহ তিনটি জেলায় যান। তার বেশ কয়েকমাস আগে উত্তরবঙ্গ সফর করে গিয়েছেন। দুই রাজ্যেই রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, আসলে তলায় তলায় বাংলা ও বিহারকে ভাগ করে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফর। পরিকল্পনাটা কী রকম? জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ ও রাঢ় বাংলার ৮০টি বিধানসভার সঙ্গে বিহারের কিষানগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার এবং পূর্ণিয়ার ৪০টি বিধানসভা নিয়ে নবম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যদিও যুক্তি সাজাচ্ছে যে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রুখতেই নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু ইতিমধ্যে এর পিছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন।
একই মত পোষণ করেছে বিরোধীরাও। তাদের মতে, আসলে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে রেখে ঘুরপথে বাংলা ও বিহার দখলের কৌশল নিয়েছে গেরুয়া শিবির। আগামী নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বঙ্গ বিজেপির তরফে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ডিসেম্বরে রাজে্যর বিপুল জনমত নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসা তৃণমূল সরকার ফেলে দেওয়া হবে। আদতে সরকার ফেলা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তাই অর্ধেক রাজ্য দখলের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও বিজেপির বঙ্গভঙ্গের কৌশল প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র বিরোধিতার রাস্তায় তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, “অত্যন্ত প্ররোচনামূলকভাবে বিজেপি ভাসিয়ে দিচ্ছে যে, বঙ্গভঙ্গ হবে। বাংলার কিছু অংশকে ভেঙে বার করে নিয়ে অন্য রাজ্যের সঙ্গে মেশাতে চায় বলে প্রচার করছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চায়। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয়বারের জন্য আশীর্বাদ করেছে। বিজেপি পরাজয় হজম করতে পারছে না বলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে চক্রান্ত করে বঙ্গভঙ্গের কথা ভাসিয়ে দিচ্ছে। গত ভোটে এত নেতারা রাজ্যে এসেছেন, তঁারাও কিছু বলেননি। এমনকী, ইস্তাহারেও কিছু লেখা হয়নি।”
আসলে বঙ্গভঙ্গের কথা বললে একটি আসনও বিজেপি পেত না বলে মনে করেন কুণাল। বিজেপি যে প্ররোচনামূলক চক্রান্ত রটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তৃণমূল সেই ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি। অন্য দিকে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্রিটিশদের তাঁবেদারি আজও ভুলতে পারেনি সংঘ পরিবারের উত্তরসূরিরা। আরএসএস বঙ্গভঙ্গে মদত জুগিয়েছিল। ওরা সব সময়ে চায় বাংলাকে তছনছ করে দিতে। এমন কিছু হলে তীব্র বিরোধিতা হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.