সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হোম কর্তার অতিথিদের যৌন লালসা তৃপ্ত করার বিনিময়ে মিলত আশ্রয়। বিহারের মুজফ্ফরপুরের বেসরকারি হোমে যৌন কেলেঙ্কারি কাণ্ডে এমনই চার্জশিট দিল সিবিআই।
মূল অভিযুক্ত তথা হোমের মালিক ব্রজেশ ঠাকুরের বিরুদ্ধে পেশ করা ৭৩ পাতার চার্জশিটে উঠে এসেছে আবাসিকা কিশোরীদের উপর যৌন নির্যাতনের বিবরণ। পকসো আদালতের অতিরিক্ত জেলা বিচারক আর পি তিওয়ারির এজলাসে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে, প্রায় প্রতি রাতেই হোমে অতিথি আসত। আর অতিথি এলেই বসত মজলিশ। আবাসিক কিশোরীদের খোলামেলা পোশাক পরতে বাধ্য করা হত। তারপর সেই স্বল্পবাসে নাচতে হত উত্তেজক ভোজপুরী গানের সঙ্গে। অতিথিদের উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে তাদের যৌন লালসা পূরণের দায়িত্বও পড়ত আবাসিক নাবালিকাদের উপরই। হোম কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশ মানতে রাজি না হলে জুটত মার। তাতেও কাজ না হলে রাতে জুটত শুকনো রুটি আর নুন। মুখ বুজে যারা এই নির্দেশ মেনে নিত, রাতে তাদের পাতে অবশ্য ভাল ভাল উপাদেয় খাবার পড়ত। তবে মার ও শুকনো রুটির বদলে যে সব সময় হোম কৃর্তৃপক্ষ ও অতিথিদের যৌন লালসা থেকে নিষ্কৃতি মিলত এমনটা নয় বলেই জানিয়েছে সিবিআই। রিপোর্টে উঠে এসেছে, অনেক সময়ই অনিচ্ছুক আবাসিকদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ধর্ষণ করা হত। মূল অভিযুক্ত ব্রজেশ ঠাকুর, কারণে অকারণে কিশোরীদের গোপনাঙ্গে মারধর করত বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।
গত বছর এপ্রিল মাসে একটি বেসরকারি সংস্থার অডিট রিপোর্টের পর মুজফ্ফরপুরের ঘটনাটি সামনে আসে। অসরকারি সংস্থা ‘সেবা সংকল্প এভম বিকাশ সমিতি’ পরিচালিত ওই হোমে কিশোরীদের উপর যৌন নির্যাতন চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে ৪২জন কিশোরীর মধ্যে ৩৪ জনের উপরই প্রায় চার বছর ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে। এরপরেই ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে মুজফ্ফরপুর পুলিশ। জুন মাসের শুরুতেই পাঁচ মহিলা-সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পুলিশি নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগে মামলাটির তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। সম্প্রতি সিবিআই পকসো আইনে ২১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে।
মূল অভিযুক্ত ব্রজেশ ঠাকুর অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে উল্লেখ করে সিবিআই। জানিয়েছে, শাসক দল জেডিইউ-এর একাধিক শীর্ষনেতার ঘনিষ্ঠ ব্রজেশ ঠাকুর। এমনই একাধিক রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি রোজ রাতে হোমে অতিথি হয়ে আসতেন। সেই তালিকায় ছিলেন বিহারের সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী মঞ্জু বর্মার স্বামী চন্দ্রশেখর বর্মা। তাঁর ফোনের কললিস্ট থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মূল অভিযুক্তের সঙ্গে বহুবার ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। এরপরেই মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন মঞ্জু বর্মা। তদন্তে ঠাকুর যাতে তার রাজন্যতিক প্রভাব খাটাতে না পারে সেই কারণে তাকে বিহারের বাইরে কোনও জেলে রাখার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। গত বছর তদন্ত শুরুর পরই আবাসিক কিশোরীদের অন্যত্র সরিয়ে প্রথেম হোমটি সিল করে দেওয়া হয়। পরে তা ভেঙেও ফেলা হয়।
[বামেদের বনধে রাজ্যজুড়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তি, ব্যাহত রেল পরিষেবা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.