স্টাফ রিপোর্টার: শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সারদা ও নারদা মামলায় তদন্ত শুরুর জন্য দিল্লির সবুজ সংকেত চাইল সিবিআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষ। সিবিআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তর সূত্রে খবর, সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের শীর্ষ অফিসাররা মনে করছেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এই দুই মামলার তদন্ত শুরু না হলে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ বা অন্য মামলার অগ্রগতি প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
নিয়োগ দুর্নীতি বা অন্য তদন্তে যখনই শাসকদলের নেতা ও ঘনিষ্ঠদের কেন্দ্রীয় এজেন্সি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে তখনই শুভেন্দুকে ছাড় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তূণমূল কংগ্রেস সিবিআই বা ইডিকে চাপে ফেলছে। এখানেই শেষ নয়, একই মামলা ও এফআইআরের ভিত্তিতে যখন ফিরহাদ হাকিম বা প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তখন অভিযুক্তের তালিকায় থাকা শুভেন্দুকে ছাড় দেওয়া নিয়ে জনমানসে সিবিআইয়ের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছে। শুধুমাত্র বিজেপি নেতা হওয়ার কারণেই সারদার এফআইআরে নাম থাকা ও প্রচুর প্রমাণ সত্ত্বেও গেরুয়া শিবিরের প্রশ্রয়ে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা। স্বভাবতই পরিশ্রম করে অন্যান্য তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সিবিআইয়ের নিজস্ব কাজের ধারাকে নিরপেক্ষ দেখাতেই এবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দুই মামলায় তদন্ত শুরুর জন্য কেন্দ্রীয় কর্তাদের সবুজ সংকেত চেয়ে বিস্তারিত তথ্য ও রিপোর্ট পাঠিয়েছে সিবিআই।
সিবিআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তর সূত্রে বৃহস্পতিবারের খবর, সারদা মামলার তথ্য তুলে দিল্লিতে বলা হয়েছে যে, কুন্তল ঘোষের চিঠির বক্তব্য ধরে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা অন্যদের জেরা করতে ডাকা হচ্ছে তখন সুদীপ্ত সেনের চিঠির ভিত্তিতে কেন শুভেন্দুকে ডাকা হবে না? বিশেষ করে কাঁথি সংক্রান্ত ঘটনায় সুদীপ্ত সেন ও সারদার সঙ্গে শুভেন্দুর আর্থিক লেনদেনের যথেষ্ট প্রামাণ্য প্রাথমিক তথ্য ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। কাঁথি পুরসভাকে ব্যাংক ড্রাফট মারফত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন জেলবন্দি সুদীপ্ত সেন। বিজেপি নেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সারদাকর্তার অভিযোগ করা সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত নথি ও তথ্যও ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করছেন সিবিআই কর্তারা। সবচেয়ে বড় কথা হল, সিবিআই বা ইডিতে বহু দক্ষ ও যোগ্য অফিসার রয়েছেন যাঁরা প্রচুর পরিশ্রম করে নিয়োগ ও অন্যান্য তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন কিন্তু এক শুভেন্দুর জন্যই তাঁদের এই পরিশ্রম জনমানসে ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির কর্তারা। যেহেতু নিয়োগ মামলায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু তদন্ত শুরু করলেই স্রেফ শুভেন্দু ইস্যুতে বিষয়টি ফিকে হয়ে যাচ্ছে, তাই এবার বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে দুই তদন্ত শুরু করতে দিল্লির ছাড়পত্র চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
কিন্তু শুধুমাত্র বিজেপি করার জন্যই শুভেন্দু দিল্লির কাছ থেকে ‘প্রোটেকশন’ পাচ্ছেন বলে ধারণা তৈরি হয়েছে তা থেকে এবার বেরিয়ে আসতে চাইছেন সিবিআইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অফিসাররা। দ্বিতীয় যে বিষয়টি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সির কর্তাদের খুবই চাপে ফেলেছে তা হল, মাঝে মধ্যেই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বিজেপি নেতারা বলে দিচ্ছেন, ‘‘অমুক নেতার বাড়িতে সিবিআই যাবে, তমুক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হবে, জেরায় গিয়ে আর ফিরবে না।’’ দলীয় স্বার্থ দেখতে গিয়ে বঙ্গবিজেপি নেতাদের এমন ঘন ঘন দাবিও কেন্দ্রীয় এজেন্সির ইমেজকে ইতিমধ্যে যথেষ্ট ক্ষতি করে দিয়েছে। এই সংক্রান্ত সমস্ত সংবাদপত্রের কাটিংও দিল্লিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন সিবিআই কর্তারা। আসলে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সিবিআইয়ের অফিসাররা নিয়োগ বা অন্যান্য দুর্নীতি মামলায় যতটুকু অগ্রসর হচ্ছেন তা ওই রাজনৈতিক নেতাদের দাবির জেরে পুরোটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে নিজেদের পরিশ্রমকে শুভেন্দু বা বিজেপি নেতাদের রাজনৈতিক স্বার্থে আর জলাঞ্জলি দিতে রাজি নন সিবিআই কর্তারা। তাই এবার সারদা ও নারদা, দুই মামলাতেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্য সবুজ সংকেত চেয়ে দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির পূর্বাঞ্চলীয় কর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.