মণিশংকর চৌধুরি, শিলং: ৩০ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। গত তিনদিনের মতো এদিনও দিনভর চলল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। কিন্তু সিবিআই আধিকারিকদের কিছুতেই সন্তুষ্ট করতে পারছেন না রাজীব কুমার। আর তাই বুধবার ফের তাঁকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হল।
মাঙ্কি ক্যাপ পরে কে ঢুকলেন ওকল্যান্ড দপ্তরে? এই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে কীসের গোপনীয়তা? ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছিল রহস্য। রাজীব কুমারকে কী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তা থেকেও যেন এদিন কৌতূহল ছিল এই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে। ভিতরে যখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের তদন্তকারী আধিকারিকরা কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে জেরা করছেন, তখন বাইরে কৌতূহলিদের অনেকেই ফেলুদা হয়ে ওঠার চেষ্টা করে চলেছেন। কোনও ফাঁক-ফোঁকর থেকে যদি খবরটা মেলে। প্রথমে শোনা গেল, ওই ব্যক্তি রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি রজত মজুমদার হতে পারেন। কিন্তু পরে জানা গেল এ তথ্য ভুল। তিনি সিবিআই আধিকারিক শ্যামলকুমার ত্রিপাঠী হতে পারেন। তবে, কিছুক্ষণ পরে সে জল্পনাতেও ইতি পড়ে। জানা যায়, শ্যামল কুমার ত্রিপাঠী নন, ওই ব্যক্তি আসলে সুদীপ্ত সেনের ব্যবসায়ীক পরামর্শদাতা শিবনারায়ণ দাস। ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ১০ টা। সিবিআই দপ্তর থেকে বেরলেন রাজীব কুমার। অন্য একটি গাড়িতে দেখা গেল সেই মাঙ্কি ক্যাপ পরা আধিকারিককে।
সোমবারই সারদার প্রশ্নোত্তর পর্বে একপ্রকার ইতি টেনেছিলেন তদন্তকারীরা। তাই প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে আর হাজিরা দিতে হয়নি। জেরা শেষে বলেছিলেন, ‘নৈতিক জয়’ হয়েছে তারঁ। আর মঙ্গলবার শহরে পা রেখেই রাজীব কুমারকে একহাত নেন সাংবাদিক। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে তথ্য লোপাটের অভিযোগও তুলে দেন তিনি। কিন্তু চতুর্থ দিনের জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব কুমারের গলায় শোনা গেল অন্য কথা। সূত্রের খবর, এদিন নগরপাল তদন্তকারীদের জানান, সারদা মামলায় সিটের কাছে যে তথ্য জমা পড়েছিল, সে বিষয়ে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন না। এই সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি বিধাননগর কমিশনারেটের ততকালীন গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষকে সাহায্য করেছিলেন মাত্র। অর্ণব ঘোষ তাঁর থেকে কিছু পরামর্শ চেয়েছিলেন বলে জানান রাজীব কুমার। তবে কুণাল ঘোষের থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে রাজীবের বয়ানের সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর।
এদিন মূলত রোজভ্যালি এবং টাওয়ার গ্রুপ সংক্রান্ত বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রাজীব কুমারকে। হাজির ছিলেন রোজভ্যালি কাণ্ডের তদন্তকারী আধিকারিক সোজম শেরপাও। কিন্তু রাজীব কুমারের উত্তরে এখনও যে সিবিআই আধিকারিকরা সন্তুষ্ট নন, তা স্পষ্ট। আর তাই তাঁকে বুধবারও হাজিরা দিতে হবে। রাজীব কুমারের আইনজীবী বিশ্বজিত দেব জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার থেকে যেহেতু রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু, তাই এই সময়টা পুলিশ কমিশনারের শহরে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। তবে সিবিআই সেসব কথা কানে তোলেনি। যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁদের সমস্ত কৌতূহল দূর হয়, ততক্ষণ রেহাই নেই রাজীব কুমারের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.