সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলায় বাজিমাত বিরোধীদের। ৪ টি লোকসভা এবং ১০ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে কোণঠাসা কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি। লোকসভা ও বিধানসভা মিলিয়ে মোট ১৪ টি আসনের ১২টিতে প্রার্থী দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এর মধ্যে মাত্র ২টি আসনে জিতেছে বিজেপি। বাকি ১০টি ক্ষেত্রেই জয়ী হয়েছেন বিরোধী প্রার্থীরা। বাকি ২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপির জোটসঙ্গীরা। তার মধ্যেও একটি আসনে জিতেছে বিরোধীরাই।
উপনির্বাচনগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি নজর ছিল যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে। গোরক্ষপুর ও ফুলপুর লোকসভা উপনির্বাচনে যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল তা অব্যাহত রইল কৈরানাতেও। গোরক্ষপুর এবং ফুলপুরে বিজেপিকে মাত করেছিল সপা-বসপা জোট প্রার্থী। কৈরানা লোকসভা কেন্দ্রেও তাই জোটবদ্ধভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিরোধীরা। আর তাতেই বাজিমাত জোট শিবিরের। বিজেপি প্রার্থী মৃগাঙ্ক সিংকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারালেন বিরোধী জোটের তরফে রাষ্ট্রীয় লোক দলের প্রার্থী তবসুম হাসান। শুধু কৈরানা নয়, নুরপুর বিধানসভা আসনেও বিরোধী জোটের সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যের এই ফল ১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ, যোগী আদিত্যনাথ সরকার গড়ার পর সবকটি উপনির্বাচনেই হারতে হল গেরুয়া শিবিরকে। বিরোধীরা দাবি করছে এই ফলেই প্রমাণ হল উত্তরপ্রদেশে যোগী ম্যাজিক শেষ। একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলা মেনে চলতে পারলে লোকসভাতেও একই হাল হতে চলেছে বিজেপির। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ৮০ টির মধ্যে ৭৩ টি আসনে জিতেছিল বিজেপি এবং তার জোট সঙ্গীরা। আলাদা আলাদা লড়াই করে বিরোধীরা জিতেছিল মাত্র ৭ টি আসনে। কিন্তু বিরোধীরা জোটবদ্ধ হওয়ার পর সবকটি উপনির্বাচনে পরাস্ত হতে হল গেরুয়া শিবিরকে। রাজনৈতিক মহলের মতে ১৯-এর লোকসভাতেও যদি, সব আসনে একের বিরুদ্ধে এক এই ফর্মুলা মেনে চলতে পারে বিরোধীরা তাহলে উত্তরপ্রদেশে বড়সড় ক্ষতির সামনে পড়তে হবে বিজেপিকে।
খালি উত্তরপ্রদেশ নয়, দেশের অন্য প্রান্তেও অধিকাংশ আসনে পরাজিত হতে হয়েছে বিজেপি প্রার্থীদের। কৈরানার মতোই নজর ছিল বিহারের জোহিকোট আসনগুলিতে। জোহিকোটে আসনটি শাসক জেডি(ইউ) এর হাত থেকে ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস- জেডিইউ জোট। বিহারের রাজনীতিতে এই ফলাফলটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহাজোট ভাঙার পর আরারিয়া লোকসভা আসনটিতে পরাস্ত হয়েছিল বিজেপি। এবার নীতীশ কুমারের দলের জেতা আসন ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস-আরজেডি জোট। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের দাবি, ‘এই ফলেই প্রমাণিত হয় বিহারের মানুষ পাল্টিবাজ নীতীশ কুমারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
উপনির্বাচনগুলিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে কংগ্রেস। ১০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪টিতে জিতেছে রাহুল গান্ধীর দল। কর্ণাটক, মেঘালয়, এবং পাঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্রে একটি করে আসনে জিতেছে দেশের সবচেয়ে পুরনো দল কংগ্রেস। কর্ণাটকে আর আর নগরে কংগ্রেস জিতেছে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটে। পাঞ্জাবের শাহকোট বিধানসভা আসনটিও শিরোমণি অকালি দলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে হাত-শিবির। মহারাষ্ট্রের একটি কেন্দ্র উপনির্বাচন ছিল, সেখানে প্রার্থীই দিতে পারেন শাসক বিজেপি। মেঘালয়ের আম্পতি আসনটিতে জয়ী হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার মেয়ে। কংগ্রেসের জোটসঙ্গীদেরও জয়জয়াকার সব রাজ্যেই। ঝাড়খণ্ডের দুটি আসনেই এনডিএ প্রার্থীদের হারিয়ে দিয়েছে জেএমএম প্রার্থীরা। মহারাষ্ট্রের ভান্দ্রা-গোন্ডিয়া লোকসভা কেন্দ্রে জিতেছে কংগ্রেস সমর্থিত এনসিপি প্রার্থী।
এসবের মধ্যে বিজেপির স্বস্তির খবর পালঘার কেন্দ্র। শিবসেনার প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও এই আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে বিজেপি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর উত্তরাখণ্ডের থারালি আসনটি কোনওরকমে ধরে রেখেছে বিজেপি। নাগাল্যান্ডের একমাত্র লোকসভা আসনটিতে জিতেছে বিজেপির জোটসঙ্গী। এ রাজ্যের মহেশতলা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। তবে, সব মিলিয়ে বিরোধীদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। ১৪ টি আসনের মধ্যে বিরোধীরা যেখানে ১১ টি দখল করেছে সেখানে এনডিএ-র দখলে গিয়েছে মাত্র ৩টি।
রাজনৈতিক মহলের মতে উপনির্বাচনের ফলে কয়েকটি জিনিস মোটামুটি স্পষ্ট। প্রথমত, ২০১৪-র পর থেকেই ক্রমশ জনপ্রিয়তা কমছে বিজেপির। ১৪ লোকসভা নির্বাচনের পর মোট ২৩ টি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে তাঁর মধ্যে বিজেপি জিতেছে মোটে ৪ টি, ১৯ টি গিয়েছে বিরোধীদের ঝুলিতে। দ্বিতীয়ত, প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। যে আসনগুলিতে সরাসরি এনডিএ বনাম ইউপিএ লড়াই ছিল তাঁর বেশিরভাগই গিয়েছে ইউপিএর দখলে। সর্বোপরি, আরও একবার প্রমাণিত হল বিজেপিকে রুখতে হলে মমতার একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলা মানতেই হবে বিরোধীদের। তাতে যেমন সাফল্য মিলবে, তেমনি সেই ফর্মুলা না মানলে আসতে পারে ব্যর্থতাও। পালঘরে যেমন চতুর্মুখী লড়াই হওয়ায় খুব সহজেই জয় পেয়ে গেল বিজেপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.