বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: বাজেট অধিবেশেনর শুরু থেকেই সংসদে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে যে সমস্ত ইস্যু নিয়ে রাজ্যের সংঘাত রয়েছে তা নিয়ে কেন্দ্রকে চরম আক্রমণে নেমেছে তৃণমূল। রাজ্যপাল ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ করার পরে এবার সংসদেও বিষয়টিতে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার সংসদের দুই কক্ষেই রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের উপর আলোচনায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে নাম না করেই বাংলার রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে দলের দুই বর্ষীয়ান সাংসদকে।
এদিন সকালে রাজ্যভায় দলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy) বলেন, রাজ্যপালের আচরণ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “সাংবিধানিক পদাধিকারী রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তার মতো আচরণ করছেন। বিরোধী শাসিত রাজ্যে দৈনন্দিনের প্রশাসনিক কাছে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন প্রেস রিলিজ জারি করে রাজ্য সরকারকে যেভাবে বিব্রত করছেন তা নজিরবিহীন। এভাবেই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হচ্ছে।”
লোকসভার সৌগত রায়ও (Sougata Roy) একই সুরে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে টেনে বিরোধী শাসিত সব রাজ্যেই রাজ্যপালের ভূমিকা রাজ্য সরকারগুলিকে বিব্রত করা এই অভিযোগকে সামনে রেখেই সরসারিই প্রশ্ন তুলেছেন, “বাংলাতে রাজ্যপাল রোজ টুইট করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বলছেন, সংবিধানের কোন ধারায় তিনি এই কাজ করেছেন।” আইএএস ক্যাডার রুল সংশোধন নিয়েও দুই সভাতেই তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। পেগাসাস (Pegasus) নিয়ে বিশ্বের সমস্ত দেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উঠে আসা তথ্যে মোদি সরকার পেগাসাস কিনেছে এবং ব্যবহার করেছে একথা সামনে উঠে এলেও একমাত্র কেন্দ্র সরকারই তা ঠিক নয় বলছে সেকথা উল্লেখ করে বাকির সবাই মিথ্যে বলছে একমাত্র ভারত সরকারই সত্যি কথা বলছে বলেও কটাক্ষ করেছেন।
অন্যদিকে, সৌগত নেতাজির মূর্তি বসানো থেকে শুরু করে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) উদ্বোধন করা ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের হলোগ্রাম মূর্তি ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। নেতাজির সঙ্গে বিজেপি মানায় না, কারণ তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছিলেন, বিজেপির নেতাজি প্রীতি বাংলার রাজনীতিতে কল্কে পাওয়ার জন্যই বলেই সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তিনি। কেন্দ্র সরকার সন্ধ্যার মতো নবতিপর শিল্পীকে পদ্মশ্রী দিয়ে অপমান করেছে এবং সেই অপমান সহ্য না করতে পেরেই তিনি অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন সৌগত।
সৌগতর আক্রমণ, নতুন সংসদ ভবন ও ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সেন্ট্রাল ভিস্তার মতো প্রকল্প কেন করা হচ্ছে সেই পয়সা কারও পিতৃদেবের পয়সা নয়, মোদির তাজমহল তৈরি হচ্ছে। তিনি বলার সময় ট্রেজারি বেঞ্চের তরফ থেকে হইহই করে আপত্তি জানিয়েছেন বিজেপি (BJP) সাংসদরা। কিন্তু তাতে গুরুত্ব না দিয়ে পাল্টা গলা চড়িয়ে সৌগতর জবাব, “গণতন্ত্রে আমরা বলবই। যতক্ষণ না পর্যন্ত গলা চিরে রক্ত বার হয়ে যায় ততক্ষণ প্রতিবাদ করব।” রাষ্ট্রপতির ভাষণে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কঋ,কদের প্রাণহানি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি পেট্রল ডিজেল নিয়ে কেন চুপ ছিলেন সেই প্রশ্নও করেছেন তিনি। বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার চরমে পৌঁছেছে বলেও নিশানা সেধেছেন তিনি। দেশের মানুষ বড় দুঃখী তাই তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও’ কবিতার লাইনও আওড়েছেন সৌগত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.