সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃষিক্ষেত্রে বড় ঘোষণা নেই, আয়কর হারে ছাড় নেই, রেল, সড়ক, পরিকাঠামো খাতেও বিরাট কোনও চমক নেই। মোট কথা দ্বিতীয় মোদি সরকারের শেষ বাজেট বা ভোট অন অ্যাকাউন্ট কার্যত চমকহীন। সেভাবে দেখতে গেলে এবারের বাজেটের ঘোষণা বলতে শুধু ১ কোটি বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ, আবাস যোজনায় ২ কোটি বাড়ি, ৩ কোটি ‘লাখপতি দিদি’ তৈরির প্রতিশ্রুতি। এর কোনওটিই সরাসরি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো ঘোষণা নয়।
চলতি বছরই লোকসভা ভোট (Lok Sabha Elections 2024)। তাই এবারে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের সুযোগ পায়নি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এবারে ৩ মাসের জন্য ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ হয়েছে। তাই বড় ঘোষণার অবকাশ বিশেষ ছিল না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম দফায় ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ফায়দা তুলতে অন্তর্বর্তী বাজেটেও বেশ কিছু বড় ঘোষণা করে চমক দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক ছিল পিএম কিষান প্রকল্প ঘোষণা করা। ৬০ বছরের বেশি বয়সি অসংঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য ৩ হাজার টাকা করে মাসিক পেনশন ঘোষণা করা। এমনকী আয়কর কাঠামোতেও বড় ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
২০২৪ সালে ছবিটা সম্পূর্ণ উলটো। নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman) নিজের বাজেট বক্তৃতায় উন্নত ভারতের দিশা দেখিয়ে গেলেন। শুধু বলে গেলেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। ভোটের কথা মাথায় রেখে বড় চমক তো দূরের কথা, ছোটখাটো জনমুখী ঘোষণাও সেভাবে দেখা গেল না। আসলে বাজেট ভাষণে নির্মলা সীতারমণ স্পষ্ট বলে গেলেন, তৃতীয়বারের জন্য বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মোদি সরকারের প্রত্যাবর্তন সময়ের অপেক্ষা। অর্থমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা, “জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ বাজেটে গোটা বছরের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হবে।” নির্মলা নিজের ভাষণে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সরকার ফিরছে, তাই তড়িঘড়ি চমক দেওয়ার পক্ষে তিনি নন।
আসলে ২০১৯ এবং ২০২৪, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। ২০১৯ সালে পীযূষ গোয়েল যখন বাজেট পেশ করছেন তখনও পুলওয়ামা হামলা বা বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক হয়নি। রাফালে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ মোদি সরকার তখনও বেশ বিপাকে, সেই সঙ্গে ছিল কৃষকদের অসন্তোষ। সব মিলিয়ে বেশ চাপে ছিল মোদি সরকার। সেই চাপ কাটাতে একই সঙ্গে মধ্যবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক সবার জন্য বড় ঘোষণা করতে একপ্রকার বাধ্য হয় কেন্দ্র। ২০২৪-এ পরিস্থিতি আলাদা। এই মুহূর্তে রামমন্দিরের (Ram Mandir) স্রোতে ভাসছে বিজেপি। মন্দির নির্মাণের পর যেভাবে হিন্দুত্ববাদের প্রচার শুরু হয়েছে, তাতে বিরোধীদের পক্ষে পেরে ওঠা কঠিন। তাছাড়া বিরোধী শিবিরও বিক্ষিপ্ত। ইন্ডিয়া (INDIA) নামের একটি জোট তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু সেই জোট এখন নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বিহারের জোট ভেঙে NDA জোটে নাম লিখিয়েছেন নীতীশ কুমার। জোটের অন্যতম শরিক হেমন্ত সোরেন ইডির হেফাজতে, কেন্দ্রীয় এজেন্সির ত্রাস তাড়া করছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তেজস্বী যাদবদেরও। তাছাড়া রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে জট তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে মোদি-শাহরা একপ্রকার নিশ্চিত ২০২৪-এ রেকর্ড সংখ্যক আসন নিয়ে ফিরছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ইদানীং সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর সম্ভবত সে কারণে বাজেটে নির্মলা শুধুই সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন দেখিয়ে গেলেন, সেই সঙ্গে বিরত থাকলেন বড় ঘোষণা থেকে।
যদিও তাতে ক্ষুব্ধ বিরোধী শিবির। অকালি দলের সাংসদ হরসিমরত কৌর যেমন বলছেন, এই বাজেট অন্তঃসারশূন্য। এখন থেকেই যেভাবে ক্ষমতায় ফেরার সরকারের ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.