সুমিতা ভাস্কর: সকাল থেকেই মন দিল্লিমুখী। বাজেট নিয়ে উত্তেজনা। বারেবারেই টিভির দিকে নজর। যার জন্য শুরু থেকেই উৎসাহ সবচেয়ে বেশি সেই আয়করের বিষয়টা বাজেট বক্তৃতায় এল সবকিছুর শেষে। কারণ কেন্দ্রের চমকটা ছিল সেখানেই। আর সেই করে ছাড়ের গল্প শুনেই খুশির প্রাণ গড়ের মাঠ। কারণ ছাড় লাফিয়ে বেড়েছে অনেকটা। কিন্তু ঠিক কতটা কী হয়েছে? সব ঠিক মতো বুঝেছেন তো? ঠিক যতটা ছাড় পাচ্ছেন বলে ভাবছেন, তা পাচ্ছেন কি?
একটু সহজ অঙ্কে আসা যাক।
ছাড়ের অঙ্কটা বেড়েছে। আর সেটা আড়াই লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষই হয়েছে। যে কিন্তু কর ছাড়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ভাষায় যাকে স্ল্যাব বলা হয় তাতে কিন্তু কোনও বদল হয়নি। তার মানে এতদিন যে হারে কর দিতে হত সেই করের হারে বদল হচ্ছে না। কিন্তু সাধারণ মধ্যবিত্তের জন্য রয়েছে খুশির খবর। কারণ যাঁরা বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন তাঁদের কোনও করই দিতে হবে না। আবার এর থেকে কিছু বেশি টাকা যদি পকেটে আসে তাহলে সেটা যদি নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করা যায় তাহলেও করবাবদ সরকারের ঘরে দিয়ে দিতে হবে না কিছুই। সঙ্গে বেড়েছে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের মাত্রাও। তবে সব মিলিয়ে মোট অঙ্কটার উপর কিন্তু বিশেষ লাভক্ষতি হচ্ছে না। কারণ করের স্ল্যাব থাকছে একই।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক, আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অর্থবর্ষে আপনার রোজগার পাঁচ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকার উপর আপনাকে কোনও কর দিতে হবে না। তার উপরে যে পঞ্চাশ হাজার রোজগার, সেটার উপরেও আপনি স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ছাড় পাবেন। এতদিন এই স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ছাড় পাওয়া যেত চল্লিশ হাজার, যা এখন বেড়ে হল পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিন্তু তার উপরে বাড়তি যে দশ হাজার টাকা সেটা কিন্তু করমুক্ত নয়। তবে সেটা যদি আপনি আয়কর আইনের ৮০ সি ধারার আওতায় বিনিয়োগ করেন, যেমন গৃহঋণ, জীবনবিমা, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি ক্ষেত্রে, তাহলে কিন্তু আপনার পুরো রোজগারটাই করমুক্ত হতে পারে। সব মিলিয়ে ছাড়ের অঙ্ক সাত লক্ষ। কিন্তু যদি দেখা যায় দেড় লক্ষ বিনিয়োগ, পঞ্চাশ হাজারের স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ইত্যাদি হিসাবে ধরার পরেও আপনার রোজগার সাত লক্ষের থেকে এক টাকা বেশি হয় তাহলেই কিন্তু আপনার অবস্থার বিশেষ কোনও বদল হচ্ছে না। তখন আপনার সমস্ত আয়ই পড়ছে পুরনো স্ল্যাবের মতোই। অর্থাৎ আগে আপনাকে যেমন হারে কর দিতে হত, দিতে হবে সেই আয়করই।
তার মানে সহজ অঙ্কটা হল, কর ছাড়ের ক্ষেত্রে যাঁরা ন্যূনতম ছাড়ের স্ল্যাব হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত রেহাই পেতেন, তাঁরা যে ওই ছাড় পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। কারণ আয়কর আইনের ৮৭এ ধারাটির কোনও বদল ঘটানোর প্রস্তাব করা হয়নি। ফিনান্স বিলে এ কথার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। পাঁচ লক্ষের উপর আয়ে যাঁদের কর দিতে হবে, তাঁদের কিন্তু আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে আড়াই শতাংশ হারেই কর দিতে হবে পুরনো নিয়ম মতো। তবে পাঁচ লক্ষের কম বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে বছরে সাড়ে বারো হাজার টাকা পর্যন্ত বাঁচানোর সুযোগ থাকছে করদাতাদের সামনে।
তাহলে লাভটা কাদের হচ্ছে? লাভটা সামগ্রিকভাবে মধ্যবিত্তের। যে সমস্ত মানুষের মাসে গড় রোজগার কমবেশি ষাট হাজার টাকা পর্যন্ত, তাঁদের কর নিয়ে বিশেষ মাথা না ঘামালেও চলবে। কিন্তু উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের জন্য কোনও সুখবর নেই এবারের বাজেটে। আসলে দেশের অধিকাংশ করদাতা, যাঁরা বছরে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ বা তার কম রোজগার করেন তাঁদের জন্য এই করের হিসাব একই সঙ্গে যেমন সুবিধা প্রদানকারী তেমনই সহজ। সেই কারণেই দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ এতে সুবিধা পাবেন বলে কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কারণেই কর ছাড়ের ঘোষণার সময় সংসদ জুড়ে ‘মোদি’ ‘মোদি’ জয়ধ্বনি। কিন্তু এতকিছুর পরেও আয়ের অঙ্ক সাত লক্ষ এক টাকা হলেই পুনর্মূষিক ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.