বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: একজন সদ্য প্রয়াত। আরেকজন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। প্রথমজন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দ্বিতীয়জন বিজেপির ‘লৌহপুরুষ’ লালকৃষ্ণ আডবাণী। নীতিগতভাবে দুজনে দুই মেরুর বাসিন্দা। দুজনের মধ্যে অমিল বিস্তর। কিন্তু একটি জায়গায় দুজনের মত ও বিশ্বাস মিলে যাওয়ায় এক বিন্দুতে আসতে পেরেছিলেন। দিন যতই গড়িয়েছে, ততই ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল।
যখন বুদ্ধবাবু (Buddhadeb Bhattacharya) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আর আডবাণী বাজপেয়ী সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী। সামলাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র দপ্তর। বাংলার মাদ্রাসা (Madrasa)নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বক্তব্য মনে ধরেছিল আডবাণীর। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, “মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষা দিন তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু তার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষাও দিতে হবে। যেমন রামকৃষ্ণ মিশন দেয়। কিন্তু মাদ্রাসা নিয়ে আমাদের কাছে এমন কিছু খবর আসছে যা উদ্বেগজনক।” যদিও পার্টির চাপে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে হয় বুদ্ধবাবুকে। আর তখন থেকেই একটু একটু করে সংখ্যালঘু ভোট বামেদের কাছে থেকে সরতে থাকে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।
দিল্লিতে বিজেপি (BJP) শিবিরের সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের যোগাযোগ ছিল খুবই সীমিত। তবে তার মধ্যেও লালকৃষ্ণ আডবাণীর (LK Advani) সঙ্গে তাঁর কিছুটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আডবাণী যখন বাজপেয়ী সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেসময় পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় আইএসআই-এর (ISI) কার্যকলাপ রুখতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রের সাহায্য চেয়েছিলেন। আডবাণী সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।
রাজনৈতিক ও আদর্শগত মতভেদ থাকলেও বুদ্ধদেবের প্রশাসনিক অবস্থান আডবাণীকে মুগ্ধ করেছিল। বিশেষত দুটি কারণে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। প্রথমত, বাংলার মাদ্রাসা নিয়ে বুদ্ধবাবুর অবস্থান, দ্বিতীয়ত, তৎকালীন সময়ে দেশজুড়ে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের তৎপরতা ও জাতীয় নিরাপত্তা। বুদ্ধবাবু দিল্লিতে গেলেই আডবাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল বাধ্যতামূলক। আবার ইউপিএ (UPA) সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও সেই যোগাযোগ ছিল। শিবরাজ পাটিল যখন ইউপিএ সরকারের কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তখন দার্জিলিংয়ের গোর্খা পার্বত্য পরিষদকে স্বশাসিত সংস্থার মর্যাদা দিতে সংসদে বিল আনেন। বাম সমর্থিত ইউপিএ সরকারের সেই বিল আটকানোর জন্য সাহায্য চাইতে বুদ্ধদেব সেসময় লোকসভার বিরোধী দলনেতা আডবাণীর বাড়ি যান। পরবর্তীকালে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের সমস্যা নিয়ে সংসদে এক আলোচনায় এল কে আডবাণী বলেছিলেন, ”বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই সমস্যার গুরুত্ব বোঝেন। তাই এনিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতাও করেন।”
যদিও মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অবস্থান বিপাকে ফেলে দেয় বামেদের (Left Front)। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এহেন অবস্থানে একটু একটু করে চটতে শুরু করে সংখ্যালঘু সমাজ। সিপিএমের (CPM) জনসমর্থন কমতে থাকে। এর পর রাজ্যের মুসলিমদের সামাজিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত হয় সাচার কমিটির রিপোর্ট। এই রিপোর্ট আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। ড্যামেজ কন্ট্রোলে ব্যর্থ হয় বামেরা। কিন্তু তাকেই হাতিয়ার করে এখন হিন্দু ও মুসলিম আড়াআড়ি বিভাজনের কৌশল নিয়েছে গেরুয়া শিবির। প্রতি মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.