সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সদ্য শেষ হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান। এখনও বাড়ির চতুর্দিকে বিয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। নতুন আত্মীয়দের ভিড়ে পোশাক, গয়নাগাটি গুছিয়ে তুলে রাখার সময়ও পাননি নববধূ। সবচেয়ে বড় কথা যে মানুষটির জন্য নিজের প্রিয়জনদের ছেড়ে চলে আসা তাঁকেও ঠিকমতো চিনতে পারেননি তসলিন ফতিমা। তার আগেই দিল্লির হিংসায় প্রাণ গেল আশফাক হোসেনের। স্বামীর জন্য মর্গের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেই সময় কাটছে তরুণীর। মাত্র ১২ দিনে দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যাওয়া যেন মানতেই পারছেন না নববধূ। খাওয়াদাওয়া তো দূর, ঠিক করে আর কথাও বলতে পারছেন না স্বামীহারা তসলিন।
পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদের গোকুলপুরীর বাসিন্দা বছর বাইশের আশফাক হোসেন। ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন তিনি। রোজগার বেশ ভালই হচ্ছিল। তাই পরিবারের লোকজনের সিদ্ধান্তে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। ছেলের জীবনসঙ্গিনী হিসাবে বুন্দলশহরের বাসিন্দা তসলিন ফতিমাকে বেছে নেন তাঁরা। ঘটা করে সমস্ত রীতিনীতি মেনে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসার দিনে চার হাত এক হয়। পরিজনদের ভিড়ে দিব্যি হইহই করে দিন কাটছিল নবদম্পতির। মঙ্গলবার দুপুরে সবে খেতে বসেছিলেন আশফাক। যত্ন করে স্বামীকে রেঁধে খেতে দেন তসলিন। আচমকাই বেজে উঠল তাঁর মোবাইল ফোন। এলাকার একটি বাড়ির সামান্য কিছু ইলেকট্রনিক্স কাজকর্মের জন্য ডেকে পাঠানো হয় আশফাককে। খাওয়াদাওয়া সেরে প্রতিবেশীর বাড়িতে যান ওই যুবক। ততক্ষণে অবশ্য উত্তর-পূর্ব দিল্লি জ্বলছে। তবে আশফাক ভেবেছিলেন নিজের পাড়ায় যাচ্ছেন। তাই কোনও সমস্যায় পড়বেন না। বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সেরে নববধূর কাছে ফিরে আসবেন।
কিন্তু ভাবনার সঙ্গে মিলল না বাস্তব। বাড়ির বাইরে পা রাখামাত্রই বিপদ যেন তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। একদল দুষ্কৃতী লাঠি, বন্দুক, বোমা হাতে আশফাককে ঘিরে ধরেন। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে দিতে গুলি চালাতে শুরু করে হামলাকারীরা। মুহূর্তের মধ্যে ঝাঁজরা হয়ে যায় আশফাকের গোটা শরীর। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। আশফাক যে মারা যেতে পারে, তা হামলাকারীদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তাই তড়িঘড়ি ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঠিক সেই সময় আশফাকের বাবা মসজিদ থেকে ফিরছিলেন। তিনি দেখেন, রাস্তায় রক্তস্নাত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর সন্তান। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পাগলপারা অবস্থায় চিৎকার করে প্রতিবেশীদের জড়ো করেন। সকলের সহযোগিতায় আশফাককে আল-হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসক জবাব দিয়ে দেন, আশফাক আর নেই।
এখন আশফাকের দেহ রয়েছে মর্গে। মাত্র ১২ দিনের দাম্পত্য জীবন শেষ। শেষ হয়ে গিয়েছে একসঙ্গে সুখে বাঁচার স্বপ্ন। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত তসলিন। ভেজা চোখে খালি বলে চলেছেন, “মাত্র একদিন একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছিলাম আমরা। আমি তো ভাল করে জানতেও পারলাম না, ও কেমন মানুষ ছিল।” আপাতত স্বামীর কাটাছেঁড়া দেহ শেষবার দেখার জন্য খাওয়াদাওয়া ছেড়ে মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তসলিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.