অর্ণব আইচ: লক্ষ্য স্থির সীমান্তপারের শত্রুর দিকে। শুধু ট্রিগার টেপার অপেক্ষা। ৩৯ কিলোমিটার দূরে থাকা শত্রুকেও এবার ঘায়েল করবে ‘ষড়ঙ্গ’। অস্ত্রটির জন্ম হয়েছিল রাশিয়ায়। তখন তার নাম ছিল ১৩০ মিমি এম-৪৬। এবার সম্পূর্ণ ভারতীয় পদ্ধতিতে এই অস্ত্রটির উন্নতি ঘটিয়ে তা পরিণত করা হচ্ছে ১৫৫ মিমি ৪৫ ক্যালিবারে। এই উন্নতমানের কামান বা অস্ত্রই হচ্ছে ‘ষড়ঙ্গ’। এই কর্মকাণ্ডের ভার নিয়েছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি)।
[উপত্যকায় নয়া আতঙ্ক স্নাইপার জঙ্গিরা, চিন্তায় সেনা]
ওএফবি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে ওএফবি-র চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ওএফবি-র ডেপুটি ডিরেক্টর অলোক প্রসাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্তা নিধি ছিব্বারের এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৩০০টি ১৩০ মিমি এম-৪৬ অস্ত্র বা ‘গান’ রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। প্রত্যেকটি অস্ত্রই পরিণত হবে ১৫৫ মিমি ৪৫ ক্যালিবারে। কথিত রয়েছে, দেবতা বিষ্ণুর অব্যর্থ ধনুক ‘ষড়ঙ্গ’ তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা। সেই ‘ষড়ঙ্গ’-এর নামেই এই নামকরণ হয়েছে এই উন্নততর অস্ত্রের। চার বছরের মধ্যে ‘ষড়ঙ্গ’ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেবে ওএফবি। সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রয়োজনে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ থেকে অনেকটা দূরেই রাখতে হয় অস্ত্র। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে শত্রুকে আয়ত্তে আনতে গেলে অনেকটা দূর থেকেও চালাতে হয় লড়াই। আবার প্রয়োজন হলে উড়ন্ত হেলিকপ্টারের দিকেও তাক করতে হয় বন্দুকের নল। এই ক্ষেত্রে ১৫৫ মিমি ৪৫ ক্যালিবার ব্যবহার করা অনেকটাই সহজ। যেখানে ১৩০ মিমি অস্ত্র থেকে গোলা ছুটে গিয়ে ২৭ কিলোমিটার দূরে শত্রুদের ঘায়েল করতে পারত, সেখানে ‘ষড়ঙ্গ’ থেকে বেরিয়ে আসা ১৫৫ মিমি গোলা অতি সহজে ৩৯ কিলোমিটার দূরে থাকা শত্রুদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে পারবে। আর তা যে এই অস্ত্র করতে পারে, তার প্রমাণ মিলেছে রাজস্থানের পোখরানে। এই পোখরানের মাটির তলায় একসময় পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করেছিল প্রতিরক্ষা দপ্তর।
ওএফবি-র সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ‘ষড়ঙ্গ’ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এই পোখরানেই। তাতেই বোঝা গিয়েছে যে, দূর থেকে শত্রুকে গোলায় বিঁধতে ‘ষড়ঙ্গ’-র জুড়ি নেই। ‘ষড়ঙ্গ’-র মাধ্যমে ‘ন্যাটো’ সিরিজের গোলা যেমন ব্যবহার করা যাবে, তেমনই পুরনো ১৩০ মিমি চেসিসও সেনারা ব্যবহার করতে পারবেন। ‘ষড়ঙ্গ’ পরীক্ষার সময়ও দেখা গিয়েছে যে, এটি যথেষ্ট কার্যকর। জানা গিয়েছে, ‘ষড়ঙ্গ’-র ওজন হচ্ছে ৮.৪ টন। এর ব্যারেলটি ৭ মিটার লম্বা। মোট ১১.৮৪ মিটার লম্বা ও ২.৪৫ মিটার চওড়া ‘ষড়ঙ্গ’ চাকার উপর থাকে। তা বহন করাও সহজ। এই বন্দুকে কিছু ‘সেমি অটোমেটিক’ যন্ত্র রয়েছে। তার ফলে সেনাবাহিনীর পক্ষে ‘ষড়ঙ্গ’ ব্যবহার করাও তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। পাকিস্তান ও চিনের দিকে নল তাক করে সারা দিনরাত ‘ষড়ঙ্গ’ নজরদারি চালাবে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
[প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গিদের কাশ্মীরে পাঠাচ্ছে পাক রেঞ্জার্সরা, জানালেন সেনাপ্রধান]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.