অর্ণব আইচ: পাঁচশো ও হাজার টাকার জাল নোট অকেজো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙতে শুরু করল দেশের জঙ্গি নেটওয়ার্ক৷ বিশেষ করে এই রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে তৈরি হওয়া ‘নিও জেএমবি’ ও ‘আইএস’ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যেই বড় ধাক্কা খেয়েছে বলে খবর পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ তাঁদের ধারণা, এবার লুকিয়ে থাকা বহু জঙ্গি শুধু টাকা জোগাড়ের জন্য বের হবে বাইরে৷ তখন তাদের সন্ধান পাওয়াও সুবিধাজনক হবে৷ এ ছাড়াও পাঁচশো ও হাজার টাকা বাতিলের কারণে নতুন করে নেটওয়ার্ক তৈরির ক্ষেত্রেও বাধা পাবে জঙ্গিরা৷ পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর, নতুন পাঁচশো ও দু’হাজার টাকার নোটে যে ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলি আইএসআই-এর পক্ষে নকল করাও যথেষ্ট শক্ত৷ সেই কারণে ভবিষ্যতেও জাল নোট তৈরি করে পাচারকারীদের পক্ষে তা ছড়ানো সহজ হবে না বলে অনেকটাই নিশ্চিত গোয়েন্দারা৷
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর, পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি ট্যাঁকশালে তৈরি হয় মূলত পাঁচশো ও হাজার টাকার জাল নোট৷ প্রত্যেক বছর আইএসআই পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালের সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে প্রায় ৭০ কোটি টাকার জাল নোট এই দেশে পাঠায়৷ গোয়েন্দাদের মতে, যত টাকার জাল নোট গত কয়েক বছরে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যের জাল নোট ছড়িয়ে পড়েছে পাচারকারীদের হাত দিয়ে৷ দেশের অর্থনীতি ভাঙার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে এই জাল নোট কাজে লাগানো হয় জঙ্গি সংগঠনগুলির ভিত তৈরির জন্যও৷ লস্কর, জেএমবি এমনকী, আইএস জঙ্গিদের তহবিল বাড়িয়ে তুলেছে পাঁচশো ও হাজার টাকার জাল নোট৷ তাই নোট বাতিল হওয়ার পর জোর ধাক্কা খেয়েছে জঙ্গিরাও৷
গোয়েন্দাদের অভিযোগ, মালদহের কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর-সহ রাজ্যের কয়েকটি জায়গা ও অন্যান্য রাজ্যের গোপন ডেরাতেও মজুত করা আছে কয়েকশো কোটি টাকার জাল নোট৷ তাই জাল নোট চক্রের মাথায় হাত পড়লেও এখন নিশ্চিন্ত গোয়েন্দারা৷ যে পরিমাণ জাল নোট এখন চক্রের কাছে রয়েছে, সেগুলি সরানো খুব সহজ কাজ নয়৷ বরং এর মধ্যেই সেগুলি নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করছে জাল নোট পাচারকারীরা৷ যদিও পোড়ালে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই মাটির তলায় সেগুলি পুঁতে রাখার প্রবণতাই দেখা দিয়েছে৷
এদিকে, গোয়েন্দাদের কাছে খবর, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বা ‘নিও জেএমবি’-র জঙ্গি নেতাদের মধ্যে কয়েকজন এখন এই রাজ্য অথবা আশপাশের রাজ্যে গা ঢাকা দিয়ে আছে৷ পলাতক জেএমবি জঙ্গি নেতা সালেহিন, বোমারু মিজান বা কওসর, হাতকাটা নাসিরুল্লা, তালহা শেখদের মূল ভরসা পাঁচশো ও হাজার টাকার জাল নোট৷ রাজমিস্ত্রি, শ্রমিক ও অন্যান্য পেশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা জেএমবি সদস্যরা দেশের বিভিন্ন শহরে জাল নোট চালায়৷ সেই জাল নোট ‘বিক্রি’ করে পাওয়া আসল পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটই হাওলার মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে যায়৷ ওই জঙ্গি নেতাদের কাছে যে প্রচুর পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট রয়েছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত গোয়েন্দারা৷ তাদের নিজেদের পক্ষে এখন সেই বাতিল টাকা ভাঙিয়ে নতুন নোট জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব৷ তাই লোক মারফত নতুন নোট জোগাড় করার জন্যও তারা মরিয়া হয়ে যেতে পারে৷ অথবা যারা এখনও এই দেশে রয়েছে, তারা বাংলাদেশ বা নেপালেও পালানোর চেষ্টা করতে পারে৷ সেই সূত্র ধরে ওই জঙ্গিদের সন্ধানও চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.