সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দক্ষিণ ভারতও ভরসা দিচ্ছে না কংগ্রেসকে! বরং হিসেব উলটে সেখানে চমক দিতে পারে বিজেপি। এমনটাই মনে করছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। অর্থাৎ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট ও কংগ্রেসের সামনে কাঁটা বিছানো পথ আরও চওড়া হচ্ছে।
পশ্চিম ও উত্তর ভারতে বিজেপি বরাবরই শক্তিশালী। ২০১৪ থেকে গোবলয়ে গেরুয়া নিশান প্রবল বিক্রমে উড়ছে। গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সেই অর্থে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া কাজ করেনি। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও বিহারে লোকসভার নিরিখে বিজেপির ফল ভালোই। এবারও সেই ছবি খুব একটা বদলাবে বলে মনে করছেন না রাজনীতির কারবারিরা। পাশাপাশি, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে কংগ্রেসের অবস্থা তথৈবচ। আমেঠির মতো কেন্দ্র থেকে নাকি লড়ছেন না রাহুল গান্ধী। তাই শতাব্দী প্রাচীন দলটিক ভরসার জায়গা সেই অর্থে বলতে গেলে দক্ষিণ ভারতই। ইন্দিরা আম্মাকে যেভাবে কখনও ফেরায়নি বিন্ধ্যের ওপার তেমনই এবারও রাহুলদের পাশে দাঁড়াবে দ্রাবিড়-ভূম বলেই মনে করছেন খাড়গেরা। কিন্তু সে গুড়ে বালি! অন্তত প্রশান্ত কিশোর তাই মনে করছেন।
পিকের কথায়, গত ১০ বছরে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বিজেপি (BJP)। এবার গোবলয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব-ভারতে চমকপ্রদ ফল করতে চলেছে কেন্দ্রের শাসকদল। দক্ষিণ ও পূর্ব-ভারতে আসন সংখ্যার পাশাপাশি ভোট শতাংশও অনেকখানি বাড়বে পদ্ম শিবিরের। প্রশান্ত কিশোরের দাবি অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দক্ষিণ থেকে সাফ হয়ে গেলেও লোকসভা ভোটে কার্যত গেরুয়া ঝড় বইবে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলিতে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিকের দাবি, প্রথমবার তামিলনাড়ুতে বিজেপির ভোট শেয়ার দুই অঙ্ক ছোঁবে। বলে রাখা ভালো, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুতে বিজেপির ভোট শেয়ার ছিল ৩.৬ শতাংশ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ায় ২.৬। পিকে মনে করছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে তেলেঙ্গানাতেও প্রথম বা দ্বিতীয় হতে পারে বিজেপি। শুধু তাই নয়, বাংলা ও ওড়িশাতে মোদি-শাহের দল প্রথম হতে চলেছে বলে দাবি প্রশান্ত কিশোরের। তবে আসন সংখ্যা বাড়লেও ৩৭০ আসনের যে টার্গেট বিজেপি নিয়েছে তা অবশ্য কোনওভাবেই সম্ভব নয় বলে দাবি ভোটকুশলীর।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৯ দুই লোকসভা নির্বাচনে তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারে মিলিতভাবে ৫০ টি আসনও পায়নি বিজেপি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যগুলিতে মোট ২৯ টি আসন পায় গেরুয়া শিবির। ২০১৯ সালে তা পৌঁছয় ৪৭ টিতে। তবে পিকের দাবি অনুযায়ী, বিরোধী শিবির যতই এক ছাতার তলায় এসে ইন্ডিয়া জোট গঠন করুক। এবার সব রেকর্ড ভাঙতে চলেছে বিজেপি। তবে এসব কিছুর মাঝেই অন্ধ্রপ্রদেশ নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের দাবি, এই রাজ্যে জগনমোহন রেড্ডি বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, জনপ্রিয়তা ও উন্নয়নের মিশেলে আম জনতার কাছে তাঁর আপিল অনেকটাই।
অবশ্য উত্তরের পাশাপাশি এবার দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত যে বিজেপির অন্যতম টার্গেট সে আভাস ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই দক্ষিণের মন জয় করতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন মোদি-শাহরা। সে প্রক্রিয়া জারি রয়েছে এখনও। এমনকী রাম মন্দির উদ্বোধনের সময়ও মোদির মুখে বারবার শোনা গিয়েছে তামিলনাড়ুর কথা। বনবাসকালে দক্ষিণের যে সব জায়গায় রামচন্দ্র গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়, সেই জায়গাগুলিতে সময় কাটাতে দেখা যায় মোদিকে। নির্বাচনী প্রচারেও বারে বারে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে সফর করতে দেখা গিয়েছে মোদি-শাহদের। তারই সুফল লোকসভা ভোটে বিজেপি পেতে চলেছে বলে আভাস প্রশান্ত কিশোরের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.