সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর কয়েকদিনের মধ্যেই আলিগড়ে রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ সিং (Raja Mahendra Pratap Singh) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোনও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস বা উদ্বোধনে তাঁকে বিশেষ একটা দেখা যায় না। তবে নির্বাচনমুখী উত্তরপ্রদেশের ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে আলাদা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছে, গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের দীপ প্রজ্বলিত করতেই এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এটা চোখে দেখা যাচ্ছে। তবে, কোনও কোনও পর্যবেক্ষক বলছেন, যেটা চোখে দেখা যাচ্ছে না, তা আরও বেশি তাৎপর্যবাহী। তাঁদের ধারণা, ‘জাঠ রাজা’র নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যায় স্থাপন ও তার শিলান্যাস প্রধানমন্ত্রী মোদির (Narendra Modi) হাত দিয়ে করানোর মধ্যে বিজেপির সূক্ষ্ম রাজনীতি রয়েছে। কেন্দ্রের নতুন তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে যে কৃষকরা দীর্ঘ সময় ধরে টানা আন্দোলন (Farmers Protest) করে চলেছেন, তাঁদের নেতৃত্বে আছেন জাঠ কৃষকরা। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে তাঁদের মন পেতে চাইছে বিজেপি।
মুজফফরনগরের মহাপঞ্চায়েতের পরেই বিজেপির (BJP) স্থানীয় নেতারা এই অঞ্চলে জাঠ সম্প্রদায়ের শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছেন। প্রকৃতপক্ষে ওই মহাপঞ্চায়েত সেখানে জাঠদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যই ছিল। এরপরেই বিজেপি জাঠদের দীর্ঘদিনের দাবিপূরণে উদ্যোগী হয়। বিরোধীরা বলছেন, সংঘ পরিবারের বাইরে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী জাঠ ‘আইকন’, যাঁকে কংগ্রেস আমলে উপেক্ষা করা হয়েছে, তাঁকে যথাযথভাবে ব্যবহারের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি বিজেপি। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, বিজেপির নতুন খুঁজে পাওয়া ‘আইকন’ মহেন্দ্রপ্রতাপ দেশের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে মথুরা আসনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনসংঘ প্রার্থী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে (Atal Bihari Vajpayee) পরাজিত করেছিলেন। হাথরাসের মুরসান এস্টেটের জাঠ পরিবারে জন্ম নেওয়া মহেন্দ্রপ্রতাপ মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজের প্রাক্তনী। পরে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হয়েছে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়। মহেন্দ্রপ্রতাপ দেশের বাইরে থেকে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। নির্বাসিত থাকাকালীন ১৯১৫ সালে মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আফগানিস্তানে ভারত সরকার গঠন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিপ্লবী মওলানা বরকতউল্লা।
দেরিতে হলেও ‘শিক্ষাবিদ’ মহেন্দ্রপ্রতাপের এই স্বীকৃতিতে খুশি তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকারীরা। তাঁর প্রপৌত্র চরকপ্রতাপ সিং বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কারে জন্য মনোনীত হয়েছিলেন মহেন্দ্রপ্রতাপ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধীদের (Mahatma Gandhi) সঙ্গে উচ্চারিত হত তাঁর নাম। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও এই অঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারে তাঁর অবদান ৬০-৭০ বছর ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে। এদিকে, বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, ১৪ সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অন্তত ১ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে এক হাজারের বেশি বাসের ব্যবস্থা হয়েছে তাদের আনতে। ভারতীয় জনতা পার্টির কিষাণ মোর্চার ব্রিজ ইউনিটের সহ-সভাপতি সুধীর চৌধুরি বলেন, “রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপকে কংগ্রেস এবং এমনকী রাষ্ট্রীয় লোকদল উপেক্ষা করেছিল, যারা নিজেদের জাঠ প্রতিনিধি হিসাবে দাবি করে। বিজেপি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজ সংস্কারককে সম্মান জানিয়ে অতীতে সেই ‘ভুল’ সংশোধনের চেষ্টা করছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.