নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: গ্রাম বাংলায় একটা চলতি প্রবাদ রয়েছে, ‘সেজেগুজে রইলাম বসে, নিতে এল না কপাল দোষে!’ মুকুল রায়ের (Mukul Roy) অবস্থার সঙ্গে এই প্রবাদ এখন একেবারে মানানসই। দামি হোটেলের স্পা-তে চুলে কায়দা করে রং, সঙ্গে ট্রিম করা ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি। গায়ে গেরুয়া জ্যাকেট চাপিয়ে নিজের পুরানো স্টাইলে ফিরে গুরুত্ব ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলেন বটে, কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হল না।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (JP Nadda) বা অমিত শাহ কারও সঙ্গেই দেখা করার সময় তো পাননি, দলের কেন্দ্রীয় অন্য নেতাদের সঙ্গেও কথা বলার সুযোগটুকুও মেলেনি। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে লম্বা-চওড়া মন্তব্য করেছিলেন বুধবার। অথচ বৃহস্পতিবার একপ্রকার মুখ লুকিয়েই দুপুরের মধ্যে দামি হোটেলের বিল মিটিয়ে দিয়ে গোপন আস্তানায় চলে গিয়েছেন মুকুল। তারপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বেজেই চলেছে তবে ধরছে না কেউই।
সোমবার রাতে দিল্লি বিমানবন্দরে যে মুকুল রায়কে দেখা গিয়েছিল, বুধবার অভিজাত হোটেলের সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা গিয়েছে একেবারে অন্য মুকুলকে। একেবারে পুরানো ‘লুক’-এ পুরানো মুকুল হতে চেয়েছেন। তবে তা বিফলে গিয়েছে। মুকুল রায়কে নিয়ে রাজ্য বিজেপি (BJP) নেতৃত্বর আগ্রহ নেই জেনে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও একই অবস্থান নিয়েছে। সোমবার রাতে দিল্লিতে আসার পর থেকে মুকুলের তরফ থেকে বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হওয়া তো দূরঅস্ত ফোনে কথাও বলতে চাননি বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। শুধু ‘লুক’ বদল নয়, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসন্সে আক্রান্ত ৭০ বছরের মুকুল প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন বোঝাতে যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ। সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে চান। মুকুল প্রসঙ্গে এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওনার ছেলে বলছেন নাতির নাম মনে করতে পারছে না। কার সঙ্গে সেটিং করবেন?’’ বুধবার দিল্লিতে বসে মুকুল দাবি করেন যে তিনি বিজেপিতেই আছেন। সে প্রসঙ্গে এদিন বিজেপির এক দ্বিতীয় সারির নেতা বলেন, “মুকুল রায় অব না ঘর কা, না ঘাট কা।” দলের রাজ্য নেতৃত্বের মুকুলকে নিয়ে যে তীব্র আপত্তি রয়েছে সেকথা বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বার্তা পৌঁছে গিয়েছে এবং শীর্ষ নেতৃত্ব সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে বলেও জানিয়েছেন সেই কেন্দ্রীয় নেতা।
মুকলের দিল্লি আগমন এবং সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপিতে থাকার কথা ঘোষণা করা, এই সবকিছুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের মতে, প্রচারের আলো নিজের দিকে টেনে আনতে এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর নজরে আসার লক্ষ্যেই তিনি এই সমস্ত কাজ করছেন ঠিকই তবে, তাঁকে নিয়ে বিন্দুবিসর্গও আগ্রহ নেই কেন্দ্রীয় বিজেপিরও। এদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মুর্শিদাবাদে বলেন, উনি (মুকুল রায়) নাকি মানসিক সুস্থ নন, সেটাই বলছিলেন তাঁর ছেলে। তবে দিল্লি যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ হয়নি। তবে মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা ছিলেন। ফলে কোনও সিদ্ধান্ত হলে সেটা সর্বভারতীয়ভাবেই হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.