সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের বরেলির বিজেপি বিধায়ক রাজেশ মিশ্রের মেয়ে সাক্ষীর বিবাহকাণ্ডে নতুন টুইস্ট৷ দলিতকে বিয়ে করায় বাবা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে বিধায়কের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন তিনি৷ বাধ্য হয়ে বাবার বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাক্ষী৷ কিন্তু এবার তাঁর বিয়ে নিয়েই তুলে দেওয়া হল প্রশ্ন৷ সাক্ষী জানিয়েছিলেন অজিতেশ কুমারের সঙ্গে রাম জানকী মন্দিরে চারহাত এক হয়েছিল তাঁর৷ কিন্তু সেই মন্দিরের পুরোহিতের গলায় অন্য সুর৷ তাঁর সাফ বক্তব্য, যে বিয়ে নিয়ে এত জলঘোলা, সেই বিয়েই নাকি এখানে হয়নি!
শনিবার ওই মন্দিরের পুরোহিত পরশুরাম দাসকে সাক্ষী ও অজিতেশের বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এই মন্দিরে কোনও বিবাহ সম্পন্ন হয় না৷ সম্প্রতি কোনও বিয়ে হয়ওনি৷” অথচ এই দম্পতির ম্যারেজ সার্টিফিকেটে আচার্য বিশ্বপতি শুক্ল ও রাম জানকী মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে৷ কিন্তু পুরোহিতের দাবি, আচার্য শুক্লর সঙ্গে এই মন্দিরের কোনও সম্পর্ক নেই৷ পরশুরাম দাসের কথায়, “এটা ঠিক নয়৷ শুক্লকে এখানে কেউ চেনে না৷ এই মন্দিরের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই৷ পুরোটাই ভুয়ো৷ আমি এখানে গত ৪০ বছর ধরে রয়েছি৷ সার্টিফিকেটে আমার তো কোনও স্ট্যাম্প নেই৷” এখানেই শেষ নয়, মন্দিরের আশেপাশের বাসিন্দাদেরও দাবি, বিজেপি বিধায়কের মেয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যে বলছেন৷ রাম জানকী মন্দিরে কোনও বিয়ে হয়নি৷ কিন্তু সার্টিফিকেটে জ্বলজ্বল করছে ৪ জুলাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সাক্ষী-অজিতেশ৷ তাহলে, কোনটা সত্যি? কোনটাই বা মিথ্যে! নাকি দাপুটে বিধায়কের হুমকিতেই গল্পে নতুন মোড় নিয়েছে? ভয়ে-আতঙ্কে বিয়েই অগ্রাহ্য করছেন এলাকাবাসী? পুরোহিতের এমন বক্তব্য এখন এসব প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে৷
দলিত হওয়ায় অজিতেশের সঙ্গে বিয়েতে আপত্তি ছিল সাক্ষীর পরিবারের৷ বাড়ির অমতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে মন্দিরে বিয়ে করেন বিজেপি বিধায়কের কন্যা৷ তারপর থেকেই বিজেপি বিধায়ক বাবা, মেয়ে এবং জামাইকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন বলেই অভিযোগ করেন তরুণী৷ এই পরিস্থিতিতে পুলিশি নিরাপত্তার আরজি জানান সাক্ষী৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন৷ মুহূর্তে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় পুলিশকে পাশে পাননি বলে অভিযোগ সাক্ষীর৷ তাই বাধ্য হয়ে নিরাপত্তার দাবিতে এলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন৷ তারই মাঝে একটি সংবাদমাধ্যমের লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি৷ সেখানেও কাঁপা কাঁপা গলায় বাবার বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি৷ তারপরই তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমের লাইভ শোয় অভিযোগ করার পর পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে৷ কিন্তু জীবনে স্বস্তি ফিরতে না ফিরতেই নতুন সমস্যায় পড়লেন সাক্ষী৷
একদিকে পুরোহিত যখন মন্দিরে বিয়ে হওয়ার ঘটনা উড়িয়ে দিয়েছেন, ঠিক তখনই ভোপালের এক পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তাদের বাড়ির মেয়ের সঙ্গে বাগদান হয়েছিল অজিতেশের৷ ভোপালের এক হোটেলেই হয়েছিল সে অনুষ্ঠান৷ বিয়ের দিনক্ষণও পাকা হয়ে গিয়েছিল৷ সেবছরই ৯ ডিসেম্বর গাঁটছড়া বাঁধার কথা ছিল ওই কাপলের৷ কিন্তু অক্টোবরেই অজিতেশের মা প্রয়াত হন৷ আর তারপরই ওই যুবক এসে জানান, পরিবারের চাপ থাকায় বিয়েতে তিনি আগ্রহী নন৷ তবে এমন পরিস্থিতিতে এই ঘটনার সত্যতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন৷ সবমিলিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাটছে নবদম্পতি সাক্ষী-অজিতেশের জীবন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.