সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাত্মা গান্ধীকে ‘পাকিস্তানের জনক’ বলে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন বিজেপির এক মুখপাত্র। অনিল সৌমিত্র নামে ওই ব্যক্তি মধ্যপ্রদেশে বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। বৃহস্পতিবার মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে-কে দেশপ্রেমী বলে চিহ্নিত করেছিলেন ভোপালের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। এরপরই দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। চাপে পড়ে প্রজ্ঞাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে বিজেপি।
কিন্তু, তারপরই অনিল সৌমিত্রর ফেসবুক পোস্টের জেরে বিতর্ক ছড়ায় দেশজুড়ে। ওই পোস্টে অনিল লেখেন, “মহাত্মা গান্ধী হলেন পাকিস্তানের জনক। ভারত তাঁর মতো কোটি কোটি সন্তানকে জন্ম দিয়েছে। তার মধ্যে কিছু ভাল ও আর কিছু খারাপ।” এরপরই বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করা হয়। পাশাপাশি সাতদিনের মধ্যে এই বিতর্কিত মন্তব্য কেন করলেন তার জবাব দিতে বলা হয়।
তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে দেখে ক্ষমা চাইতে যান অনিল। কিন্তু, তখনও নিজের পোস্ট নিয়ে সাফাই দিয়ে বলেন, “ভারতীয় সংস্কৃতিতে জাতির জনক বলে কোনও উপাধি কোনওদিনই ছিল না। আমরা সবাই ভারতমাতার সন্তান। জাতির জনক শব্দটি চালু করেছিল কংগ্রেস। যা আজ পর্যন্ত চলে আসছে। তাছাড়া পাকিস্তান সৃষ্টির বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। জওহরলাল নেহেরু এবং মহম্মদ আলি জিন্না দু’জনকেই সাহায্য করেছিলেন। তবে কংগ্রেস মুখে গান্ধীজির কথা বললেও তাঁকে কোনওদিন অনুসরণ করেনি। বরং বিজেপি সারাজীবন গান্ধীজির নীতি মেনে চলেছে। যেমন স্বচ্ছতা অভিযান ও স্বদেশী জিনিসের ব্যবহার।”
এপ্রসঙ্গে বিজেপির এক মুখপাত্র হিতেশ বাজপেয়ী বলেন, “আমাদের দলের সভাপতি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে দল এই ধরনের মন্তব্যের পুরোপুরি বিরোধী। যারা এই ধরনের মন্তব্য করেছেন তাঁদের কাছ থেকে এবিষয়ে জবাবও তলব করা হয়েছে।”
কংগ্রেস মুখপাত্র পঙ্কজ চর্তুবেদী বলেন, “বিজেপি নেতারা যখনই সুযোগ পান তখনই মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। আর নাথুরাম গডসে-কে মহান প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। কিছুদিন আগে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে নাথুরামের মন্দির তৈরির চেষ্টা করেছিল হিন্দু মহাসভা। এই ধরনের ঘটনা দেশের মানুষ কোনওভাবেই মেনে নিতে পারবে না। বিজেপিরও এইসব ঘটনার নিন্দা করা উচিত।”
গত কয়েকদিন ধরেই মহাত্মা গান্ধী ও নাথুরাম গডসে-কে নিয়ে মন্তব্য ও পালটা মন্তব্যের জেরে সরগরম দেশের রাজনীতি। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গড়সে-কে ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী বলে মন্তব্য করেন কমল হাসান। এরপরই ভোপালের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, বিজেপি নেতা অনন্তকুমার হেগড়ে ও সাংসদ নলীন কুমার কাটিল নাথুরাম গডসে-এর সমর্থনে মুখ খোলেন। তাঁদের মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই আলোচনা দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে দেখে আসরে নামে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব। এই মন্তব্যগুলির সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তারা। পাশাপাশি ১০দিনের মধ্যে এই তিনজনের কাছ থেকে জবাবও তলব করেন অমিত শাহ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.