বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রোষের মুখে বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেড। বাংলার নয়া রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) বিরুদ্ধে অহেতুক মুখ খুলতে বারণ করা হলো বঙ্গ নেতাদের। শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্তদের বক্তব্যে আদপে প্রধানমন্ত্রী কালিমালিপ্ত হবেন।
কারণ সিভি আনন্দ বোস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁকে নিয়ে বিরোধী দলনেতা ও রাজ্যসভার (Rajya Sabha) প্রাক্তন সাংসদের মন্তব্য নজর এড়ায়নি দিল্লির নেতাদের। আবার দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বা সুকান্ত মজুমদারদের নরম অবস্তানও খেয়াল করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্যপালকে কেন্দ্র করে রাজ্য নেতাদের দু’রকম অবস্থানও ভালভাবে নেননি অমিত শাহ (Amit Shah), জেপি নাড্ডা (JP Nadda), বিএল সন্তোষরা। তাই ভবিষ্যতে রাজ্যপাল সম্পর্কে কিছু বলার আগে ভাবনাচিন্তা করে বক্তব্য রাখতে নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি। সূত্রের খবর, সম্প্রতি দিল্লিতে আসেন বাংলার নয়া রাজ্যপাল। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় হেভিওয়েট মন্ত্রীদের সঙ্গে কথাও হয়। তারপরেই এমন নির্দেশ বলে জানা গিয়েছে।
বাংলার সাংবিধানিক প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকারের সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলছেন নবনিযুক্ত রাজ্যপাল। আবার তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। নরেন্দ্র মোদির পছন্দের আমলা ছিলেন তিনি। তাঁকে ‘ম্যান অফ আইডিয়া’ বলেও সম্মোধন করতেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির ইচ্ছাতেই আনন্দ বোসকে বাংলার রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়। কিন্তু রাজভবনের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পথ এড়িয়ে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন তিনি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। কর্মজীবনে দু’বছর কলকাতায় কাজ করে গেলেও বাংলা ভাষা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা কম। তাই বাংলা শেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সরস্বতী পুজোর দিন তাঁর হাতেখড়ি অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Bose)। কিন্তু বিরোধী গেরুয়া শিবিরের কোনও হেভিওয়েট নেতা সেদিন রাজভবনে হাজির হননি। বরং রাজ্যপালের হাতেখড়ি নিয়ে আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেন শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্তরা। “কার হাতে হাতেখড়ি নিচ্ছেন তা আগে দেখে নেওয়া উচিৎ।” সতর্কবার্তা দেন দিলীপ ঘোষ। আবার পূর্ব মেদিনীপুরের এক সভা থেকে সি ভি আনন্দ বোসকে তীব্র কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবনের হাতেখড়ি অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান। সব থেকে বেশি সরব ছিলেন স্বপন দাশগুপ্ত। রাজ্যপালকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করে বলেন, “উনি অবসরের স্বর্গ রাজ্য তথা পেনশনার্স প্যারাডাইস হিসেবে এখানে আসেননি। ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি দেখতে আগে এসেছিলেন। সেই পরিস্থিতি এখনও আছে। সেসব ভুলে অনেক বেশি যেন প্লে এক্টিং হচ্ছে।” রাজ্যপালের লেখা বই সরকার অনুবাদ করবে। বইমেলায় বেরোবে। এসব আদিখ্যেতা বলেই মনে করছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ।
রাজ্য নেতাদের এহেন আক্রমণে অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্যপাল দিল্লি ঘুরে যাওয়ার পরেই বঙ্গ বিজেপি (BJP) নেতাদের কড়া বার্তা পাঠায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিল্লির নেতাদের তরফে জানান হয়, আনন্দ বোস প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের। কয়েক মাস হয়েছে রাজ্যপালের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁকে যথেষ্ঠ সময় দিতে হবে। সূত্রের খবর, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এমন কোনও মন্তব্য করা যাবে না যা হিতে বিপরীত হয়। বিরোধীরা পালটা আক্রমণের অস্ত্র পেয়ে যায়। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দিল্লিতে এসে রাজ্যের এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কার্যত নালিশ জানান রাজ্যপাল। তারপরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বঙ্গ নেতাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.