সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে, প্রবল বাধাবিপত্তি টপকে সবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন বিন্দু ও কনকদুর্গা৷ ভেঙে দিয়েছিলেন শতাব্দী প্রাচীন প্রথা৷ আঘাত করেছিলেন অচলায়তনের দেওয়ালে৷ কিন্তু চরমপন্থীদের চোখে মহাপাপ করেছেন তাঁরা৷ যার ফল ভুগতে হল বিন্দুর এগারো বছরের মেয়েকে৷ অভিযোগ, আগে আশ্বাস দিলেও, এখন তাঁর মেয়েকে আর ভরতি নিতে চাইছে না তামিলনাডুর আনাইকাট্টির একটি স্কুল৷ কর্তৃপক্ষ বিন্দুকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাঁর মেয়েকে স্কুলে ভরতি করলে পরিবেশ নষ্ট হবে৷ ফলে কোনওভাবে বিন্দুর মেয়েকে ওই স্কুলে ভরতি করা যাবে না৷
[‘ভারতে কৃষকরা কষ্টে আছেন’, ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা গড়করির ]
বিন্দু কল্যাণী জানিয়েছেন, সোমবার নির্ধারিত সময় মেয়েকে নিয়ে তামিলনাড়ুর বিদ্যা ভানাম উচ্চ বিদ্যালয়ে যান তিনি৷ এবং দেখেন স্কুলের বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে স্থানীয় বেশ কয়েকজন মানুষ৷ এরপর স্কুলের ভিতরে ঢুকে আরও অবাক হন বিন্দু৷ তিনি বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে অদ্ভুত ব্যবহার করছিল৷ আগেও দু’বার আমি ওই স্কুলে গিয়েছি৷ তখন তাঁদের ব্যবহার ছিল এক রকম৷ কিন্তু সোমবারের ব্যবহার ছিল সম্পূর্ণ আলাদা৷ স্কুলের প্রধান আমাকে জানান, আমার মেয়েকে স্কুলে ভরতি করলে পরিবেশ নষ্ট হবে৷ ফলে তাঁরা সব জেনেশুনে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করতে পারবেন না তিনি৷’’ যদিও এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দোষ স্কুলের উপর চাপাতে নারাজ বিন্দু কল্যানী৷ তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে স্কুলের বাইরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল৷ যা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ এমনকী, তাঁর মেয়েকে ভরতি না নিতে পারার জন্য বিন্দুর কাছে নাকি দুঃখপ্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ৷
[বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে রাজ্যের মতামত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট]
বিন্দু নিজেও একজন শিক্ষিকা৷ তিনি আরও জানান, মেয়েকে নতুন স্কুলে ভরতির কথা নিজের স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকাকে জানিয়েছিলেন তিনি৷ এবং শিক্ষিকাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন৷ তাঁর আশঙ্কা, ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকেই বিক্ষোভকারীদের কাছে তথ্য পাচার হয়েছে বা কেউ বিক্ষোভকারীদের জানিয়েছে৷ প্রসঙ্গত, সবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশের বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ প্রাচীন রীতি খারিজ করে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, সব বয়সের মহিলারা প্রবেশ করতে পারবেন আয়াপ্পা স্বামীর মন্দিরে৷ এরপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেরল৷ বিক্ষোভে নামেন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা৷ একাধিকবার মন্দিরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন বিভিন্ন মহিলা সমাজকর্মীরা৷ কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয় তাঁদের৷ সুপ্রিম রায়ের প্রায় চার মাস পর ইতিহাস গড়েন দুই মহিলা, বিন্দু ও কনকদুর্গা৷ পুলিশি নিরাপত্তায় রাতের অন্ধকারে আয়াপ্পা স্বামীর মন্দিরে প্রবেশ করেন বছর চল্লিশের দুই মহিলা। বিন্দুর অভিযোগ, এই ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে হচ্ছে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.