ফাইল ছবি
নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: করোনা (CoronaVirus) আতঙ্কের মাঝেও নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিহার বিধানসভার নির্বাচন। তবে ভাইরাস মোকাবিলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেই নির্দিষ্ট সময়ে ভোট করানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) অন্দরে। জানা গিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে করোনা রোগীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছে কমিশন।
চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই যে বিধানসভার ২৪৩ আসনে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে, এমনটাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড থেকে মালুম হয়েছে। করোনার জেরে ভোটদানের ক্ষেত্রে যাতে কোনও কমতি না হয়, তার জন্যই কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা ভেবেছে কমিশন। এবং কমিশনের এই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রকের ছাড়পত্রও মিলেছে। এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে ১৯৬১ সালের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, তার ২৭(এ) ধারায় নতুন একটি বিভাগ যোগ করা হচ্ছে। ‘কোভিড-১৯ সন্দেহজনক এবং আক্রান্ত ব্যক্তি’ শীর্ষক এই বিভাগের মধ্যে কারা থাকবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিলমোহরও বসে গিয়েছে।
যে সমস্ত করোনা পজিটিভ রোগী সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কোভিড হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন তাঁরা তো বটেই, পাশাপাশি বাড়িতে-প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে থাকা ব্যক্তিরাও এই পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন বলেই জানিয়েছেন নির্বাচন আধিকারিক সুশীল চন্দ্র। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “ভোট যাতে কম না পড়ে তার জন্যই এই পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা চাই না ভোট শতাংশ কোনওভাবেই কম হোক। তার জন্য প্রয়োজনে যতদূর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব কমিশন তা করবে। দরকার হলে একজন পোলিং অফিসার কোভিড পজিটিভ রোগীকে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেবেন এবং নিয়েও আসবেন।” পরবর্তীতে অন্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং উপনির্বাচনগুলিতেও প্রয়োজনে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
কোভিড রোগীর পাশাপাশি ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রেও যাতে পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়েও কমিশন বিবেচনা করছে। আরও কিছুদিন রাজ্যের করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি দেখে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াই সামাজিক দূরত্ববিধি মেনেই সম্পন্ন হবে বলে কমিশন ঠিক করেছে। তার জন্য আগে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সেখানে ১,৬০০ ভোটার ভোট দিতেন, এবার সেখানে বুথ প্রতি ভোটার সংখ্যা ১,০০০ রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেজন্য রাজ্যে বাড়তি ৩০ হাজার পোলিং বুথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগে পর্যন্ত বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি যাতে ভারচুয়াল প্রচার মাধ্যমকেই বেশি করে ব্যবহার করে, সেজন্যও কমিশনের তরফে জোর দেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচন যে নির্ধারিত সময়েই হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মিলতে শুরু করেছিল। দেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল অরোরা জানিয়েছিলেন, বিহার বিধানসভা নির্বাচন পিছনোর ইচ্ছা তাঁদের নেই। তারও অনেকদিন আগে থেকেই কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজও শুরু করে দিয়েছিল। বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে নিয়মিত ভারচুয়াল বৈঠক করছিলেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা। সেই সমস্ত বৈঠকে বিহারের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলেছে। রাজ্যের কোথায় কী মাত্রায় সংক্রমণ রয়েছে, সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ কী, সুস্থতার হার কত, এ সমস্ত বিষয়ে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করেছে কমিশন। তারপরই কমিশন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন করানোর জন্য পদক্ষেপ করা শুরু করে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিও বিহার বিধানসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। প্রচারের জন্য ভারচুয়াল মাধ্যমের উপর জোর দিয়েছে তাঁরা। দেশের প্রথম ভারচুয়াল জনসভাটিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিহার থেকেই শুরু করেছেন। আবার ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা’র সূচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিহারের খাগাড়িয়া জেলার তেলিহার পঞ্চায়েত ভবনকেই বেছে নিয়েছেন। এই সবকিছুই বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখেই করা হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.