সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির নির্দেশে অসন্তুষ্ট হয়ে যারা দেশের ভিতরেই ‘… মাঙ্গে আজাদি’ স্লোগান তুলেছিল, নাম না করে এদিন তাদের নিশানা করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জগদিশ সিং খেহর৷ একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট মোতাবেক, খেহর এদিন ইয়াকুবের মতো দাগী আসামী ও নৃশংস জঙ্গিকে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখানোর বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন৷ বরং, যাঁরা ওই জঙ্গির জন্য প্রাণ হারিয়েছেন, সেই আক্রান্তদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন খেহর৷ পাশাপাশি, আইনজীবীদেরও আবেদন জানিয়েছেন, বোমা বিস্ফোরণ, ধর্ষণ ও অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি সাহায্য করতে৷
এই প্রথম দেশের সাংবিধানিক প্রধান খেহর জঙ্গি মেমনের নাম না করে তার ফাঁসির ইস্যুতে মুখ খুললেন৷ যারা মেমনকে সহানুভূতি দেখায়, তাদের কড়া বার্তা দিলেন৷ খেহরের মতে, ইয়াকুবের মতো জঙ্গি ক্ষমা নয়, চরম সাজার যোগ্য৷ খেহর জানিয়েছেন, জঙ্গি-ধর্ষকরা কোনও ক্ষমার যোগ্য নয়৷ সহানুভূতি দেখাতে হলে আক্রান্তদের দেখান৷ ১৯৯৩-এ মুম্বই বিস্ফোরণে ২৫৭ জনের মৃত্যু হয়৷ ওই হামলার মূলচক্রীদের অন্যতম ছিল ইয়াকুব৷ এই অভিযোগে প্রায় ২০ বছর জেলে কাটানোর পর ২০১৫-র ৩০ জুলাই মেমনকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ মেমন একের পর এক সাজা মকুবের আর্জি জানিয়েছে, প্রতিবারই সুপ্রিম কোর্ট সেই আরজি নাকচ করে দিয়েছে৷ এমনকী, রাষ্ট্রপতিও মেমনের সাজা মকুব করেনি৷ কিন্তু সেই মেমনকে নিয়েই যখন দেশের গুটিকয়েক মানুষ আন্দোলন করে, দেখে তাঁর মন ব্যথিত হয় বলে ইঙ্গিত দেন খেহর৷ যারা মেমনকে ক্ষমা করে দিতে বলছিলেন, তাদের তুলোধোনা করে খেহর জানিয়েছেন, জঙ্গিরা চূড়ান্ত সাজার যোগ্য৷ ধর্ষকদের প্রতিও একই বিচার হবে৷ খেহরের বক্তব্য, “বরং সহানুভূতি দেখান আক্রান্তদের৷” তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দেশ আজব৷ যত বড় অপরাধী, তার তত বেশি প্রভাব৷ কল্পনা করুন, যাঁরা তাঁদের আপনজনদের হারিয়েছেন! যাঁরা অ্যাসিড আক্রান্ত হওয়ায় সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না, তাঁদের কী হবে?”
ইয়াকুব মেমন, আফজল গুরু, মকবুল ভাটের মতো জঙ্গিদের ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন অরুন্ধতী রায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা৷ দিল্লির জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকী কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও মেমনের ফাঁসি বিচারের নাম প্রহসন বলে স্লোগান উঠেছিল৷ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থাও মেমনের ফাঁসির বিরোধিতা করে৷ জেএনইউ, যাদবপুরে স্লোগান ওঠে, ‘হাম মাঙ্গে আজাদি, কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি৷’ এমনকী, বেশ কয়েকটি প্রথমসারির সংবাদমাধ্যম দাবি করে, মেমন, আফজলের ফাঁসির বিরুদ্ধে জেএনইউ, যাদবপুরে দেশবিরোধী স্লোগানও দেওয়া হয়৷ সলমন খান, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু, রাম জেঠমালানি, আসাদউদ্দিন ওয়েসির মতো ব্যক্তিরাও মেমনকে চরম সাজা দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ২০১৫-র জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠিও জমা দেন৷ কিন্তু কোনও আবেদনই কাজে আসেনি৷ নাগপুর জেলে সকাল ৭টায় ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ফাঁসির প্রক্রিয়া শেষ হয়। ইয়াকুবের মৃত্যু নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। ফাঁসির ভিডিও রেকর্ডিংও করা হয়৷ ময়নাতদন্তের পর দেহ নিতে নাগপুর জেলে পৌঁছন ইয়াকুবের দুই ভাই উসমান ও সুলেমান। তাঁদের হাতেই দেহ তুলে দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.