সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এককথায় ঐতিহাসিক৷ নোট বাতিল হওয়ার বিরুদ্ধে এককাট্টা বিরোধীরা৷ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট চালু রাখার দাবিতে একজোট হয়ে বিরোধীরা আগামী ২৮ নভেম্বর ‘ভারত বনধ’-এর ডাক দিলেন৷ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১৩টি দলের ২০০ জনেরও বেশি সাংসদ একযোগে বনধের ডাক দিয়েছেন৷
বুধবার শীত ও কুয়াশার চাদরে মোড়া রাজধানী এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল৷ কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের ডেরেক ’ও ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা৷ একইসঙ্গে জেডিইউ-র শরদ যাদব, সপা-র কিরণময় নন্দ৷ কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব সবাই৷ অকুস্থল সংসদ ভবনের গান্ধীমূর্তির পাদদেশ৷ সংসদের বাইরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ফটোকপি সংসদের ভিতরেও৷ প্রায় ১৩ দলের ২০০ সাংসদের মিলিত বিক্ষোভ-প্রতিবাদে দফায় দফায় মুলতুবি হল রাজ্যসভা ও লোকসভা৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি সত্ত্বেও বিরোধীদের প্রতিবাদের জেরে প্রথম দফায় বেলা বারোটা পর্যন্ত লোকসভা মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হলেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন৷ ওয়েলে নেমে প্ল্যাকার্ড হাতে সরকার বিরোধী স্লোগানে গলা মেলালেন সব বিরোধী দলের সাংসদরা৷ এদিন গান্ধীমূর্তির সামনে প্রায় দু’শোজন বিরোধী দলের সাংসদ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখান৷ হাতে হাত ধরে মানববন্ধন তৈরি করেন৷ এদিন যেভাবে সবাই একসঙ্গে মিলিত হলেন তা সাম্প্রতিক অতীতে বিরল৷
পূর্ব নির্ধারণ মতো সংসদ ভবনের বাইরে গান্ধীমূর্তির সামনে জড়ো হয়েছিল বিরোধী সাংসদরা৷ কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, গুলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খার্গে থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ’ও ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায়, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, জেডিইউ, এআইএডিএমকে-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদরা বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন৷ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে রাহুল বলেন, “এটা সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদেশে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু দু’শোজন সাংসদের দাবি সত্ত্বেও কেন সংসদে বক্তব্য রাখছেন না৷ নোট বাতিলের বিষয়টি মোদি এবং তাঁর নিজস্ব উদ্যোগপতিরা সবাই জানতেন৷ অর্থমন্ত্রী বলছেন, তিনি জানতেন না৷ এটা কি সম্ভব?” কংগ্রেস সহ-সভাপতির দাবি, এর ফলে দেশের অর্থনীতি ভয়ংকরভাবে ধাক্কা খেয়েছে৷ বিজেপিতে আগেই ফাঁস হয়েছিল নোট বদলের সিদ্ধান্ত৷ যৌথ সংসদীয় কমিটিকে নিয়ে তদন্ত হোক৷ এটা দুর্নীতির শামিল৷ তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন আজ তা ব্যাপক আকার নিয়েছে৷ এটা দুরন্ত সাফল্য৷” সুদীপবাবুর দাবি, রাহুল বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে যেতে৷ কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য জানান সময় নির্ধারণ করা হয়নি৷ তাই যাওয়া হল না৷
বিরোধী সাংসদদের মুখে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী স্লোগান৷ এরপর সংসদ শুরু হলে রাজ্যসভা এবং লোকসভা উভয় কক্ষে তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা৷ রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় সংবিধানের ২৫৮ ধারা উল্লেখ করে বলেন, “সংসদ চলছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব ঘোষণা করছেন সংসদের বাইরে৷ এটা হতে পারে না৷” মল্লিকার্জুন খাড়গে অভিযোগ করেন, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে মোদি সরকার৷ অবিলম্বে সাধারণ মানুষকে এর থেকে রক্ষা করতে হবে৷ এরপরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “সংসদে তুমুল হট্টগোল হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে আলোচনা সম্ভব নয়৷ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে গরিব মানুষ উপকৃত হয়েছে৷ তাঁরা মোদিকে মসিহা বলছেন৷” এরপরও বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদে দফায় দফায় মুলতুবি হয় সংসদের দুই কক্ষ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.