সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্ক ও আজম খান একপ্রকার সমার্থক বললে অত্যুক্তি হবে না। এই প্রথম নয়, সাম্প্রতিক অতীতেও বহুবার মহিলাদের উদ্দেশে কটূক্তি করেছেন সমাজবাদী পার্টির এই নেতা। আর মহিলাদের প্রতি তাঁর কটুক্তিই তাঁকে একাধিকবার খবরের শিরোনামে নিয়ে এসেছে। মাস কয়েক আগেই লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপি প্রার্থী জয়া প্রদা সম্পর্কে কু-মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। সেইবার পার পেলেও, এবার বেশ বিপাকে উত্তরপ্রদেশের রামপুরের সাংসদ আজম। শুক্রবার লোকসভায় মহিলা সাংসদরা দলমত নির্বিশেষে আজমের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। আর সেই চড়া সুরেই সুর মিলিয়েছেন তৃণমূলের দুই নবনির্বাচিত মহিলা সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান।
[আরও পড়ুন: অস্থিরতা নিয়ে মোদিকে চিঠি, কৌশিক সেনের পর খুনের হুমকি পেলেন অনুরাগ কাশ্যপ ]
রাজ্যের তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী আজম খানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “সংসদে দাঁড়িয়ে কোনও সাংসদই এমন ভাষায় কথা বলতে পারেন না।” পাশাপাশি তিনি স্পিকার ওম বিড়লার উদ্দেশে বলেছেন, “স্যার, সব মহিলারাই আপনার কাছ থেকে বড় কোনও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।” ওই একই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানও। তিনি বলেন, একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। সংসদের বাইরে হোক কিংবা সংসদের চৌকাঠের ভিতরে, কোনও মহিলার সঙ্গে এধরনের অভব্য আচরণের তীব্র ধিক্কার জানাই।”
আজমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ চেয়ে প্রায় সব মহিলা সাংসদই এককাট্টা হয়ে স্পিকার ওম বিড়লার সামনে সরব হয়েছেন। শুধু মহিলা সাংসদরাই নন, লোকসভার পুরুষ সাংসদরাও এদিন তাঁর আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন। যাঁকে কেন্দ্র করে পুরো ঘটনা সেই রমা দেবীও এদিন আজমকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছেন। পরিস্থিতি দেখার পরে স্পিকার সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আজমকে লোকসভার অন্দরেই বিনা শর্তে রমা দেবীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায়, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমন বার্তাও দিয়েছেন অধ্যক্ষ। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার লোকসভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিহারের বিজেপি সাংসদ রমা দেবীকে লক্ষ্য করে আজমের মন্তব্য যে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেছে সে ব্যাপারে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই একমত। মিমি, নুরতের পাশাপাশি স্মৃতি ইরানি থেকে এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে, ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি, বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষী লেখি, আপনা দলের সাংসদ অনুপ্রিয়া প্যাটেল সকলেই আজমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি এবং তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজমের ব্যবহারের কড়া সমালোচনা করেছেন।
[আরও পড়ুন: ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম… কি আর গাইতে পারব?’ সংশয়ে আশা ভোঁসলে]
এদিন সকালে স্মৃতিই প্রথম আজমের মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হন। সপা সাংসদ যে শুধু মহিলাদেরই অপমান করেছেন তা নয়, লোকসভার পুরুষ সাংসদদেরও তিনি অপমান করেছেন বলে মন্তব্য স্মৃতির। তাঁর বক্তব্য, “আমার সাত বছরের সংসদীয় জীবনের অভিজ্ঞতায় কোনও পুরুষ এই ধরনের ব্যবহার করার দুঃসাহস দেখাননি সংসদে। লোকসভা এবং রাজ্যসভাতেও এমন বহু পুরুষ সাংসদ রয়েছেন যাঁরা সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘদিন মহিলাদের সংরক্ষণের জন্য দাবি তুলেছেন। এই ঘটনা শুধু মহিলাদেরই নয়, তাঁদের পক্ষেও অমর্যাদার।”
আমেঠির সাংসদ স্মৃতি যখন জোর গলায় আজমের আচরণের কড়া সমালোচনায় মুখর, তখন বিজেপির মহিলা সাংসদরা ঘটনার প্রতিবাদে তাঁদের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও আজমের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেছেন। রমা দেবী বলেছেন, “উনি (আজম খান) কখনও মহিলাদের সম্মান করেননি। আমরা সবাই জানি, জয়াপ্রদা সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন। লোকসভায় থাকার ওঁর কোনও অধিকার নেই। স্পিকারকে আবেদন জানাব, তাঁকে বরখাস্ত করার জন্য। আজম খানকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.