Advertisement
Advertisement
Russia-Ukraine War

চারদিনে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন শেষ, দায় কার? ইউক্রেন থেকে ফিরে প্রশ্ন তুললেন বালুরঘাটের জয়তী

২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউক্রেনে পৌঁছেছিলেন জয়তী।

Bengal Medical Student raised question after returning from Ukraine | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:March 7, 2022 1:20 pm
  • Updated:March 7, 2022 4:38 pm

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। জয়তী রায়ের (Jayati Roy) দুর্দশা বোঝাতে এর থেকে ভাল শব্দবন্ধ হয়তো আর কিছুই হতে পারে না। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পরিজনকে ছেড়ে প্রায় ছ’হাজার কিলোমিটার দূরের অজানা শহরে পাড়ি দিয়েছিলেন বালুরঘাটের ডাক্তারি পড়ুয়া। কিয়েভে পা রেখেছিলেন ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে। এয়ারপোর্ট থেকে কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির হরলিভস্কা হস্টেলে যাওয়ার পথে রাস্তার দু’দিকে তুষারঘেরা স্বর্গীয় পথ দেখতে দেখতে হারিয়ে গিয়েছিলেন অজানায়। তখনও টের পাননি আগামী ৫০-৬০ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর জীবনে আসতে চলেছে এত বড় এক অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে (Ukraine) যুদ্ধ শুরু করল রাশিয়া (Russia)। জেটল্যাগ কাটার আগেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে গেল তাঁর কেরিয়ারে। শুরুর আগেই খাদের কিনারায় চলে এল বাঙালি পড়ুয়ার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। বিকট এক আওয়াজে ঘুম ভাঙে জয়তীদের। কেঁপে উঠেছিল হস্টেল বিল্ডিং। শুরুতে ভেবেছিলেন ভূমিকম্প। পরে টিভি ও মোবাইলের ফ্ল্যাশে জানতে পারেন যুদ্ধের কথা। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় ওয়ার্ডেনদের টিকির খোঁজ মেলেনি। প্রাণের ভয়ে তাঁরাও ছুটেছেন যে যার মতো। এই সময় ‌রক্ষাকর্তার মতো এগিয়ে আসেন পঞ্চম, ষষ্ঠ বর্ষের সিনিয়ররা। তাঁদের পরামর্শেই সবাই ছোটেন হস্টেলের সামনের আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিং লটের বাঙ্কারে।

Advertisement

[আরও পড়ুয়া: যুদ্ধের জেরে তেলের বাজারে আগুন, ফের পতন শেয়ার বাজারেও]

ছোট্ট এক চিলতে জায়গায় গুঁতোগুঁতি করে প্রায় চার দিন কাটিয়েছিলেন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন। ঘুণাক্ষরে এর কোনও কিছু বাড়িতে জানতে দেননি তাঁরা। ২৭ তারিখ সকালে ঠিক হয়, এভাবে তিলে তিলে মরার কোনও মানে হয় না। এরপরই ৪০ জন বাঙালি শুরু করলেন জীবনের সঙ্গে জুয়াখেলা। স্থানীয় মেট্রো স্টেশনে পৌঁছতে লেগেছিল প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। সেই সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে অজানা মিসাইল আসছে কি না দেখছিলেন কেউ। কেউ আবার অবাক হচ্ছিলেন নানা বয়সি আম আদমির হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখে।

মেট্রো পৌঁছে সামনে এল অবাক হওয়ার মতো আরেক ঘটনা। এমনিতে প্রাণ বাঁচাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছিল ইউক্রেনের নাগরিকদের। তাঁরাই ট্রেনে ওঠার প্রথম সুযোগ পাচ্ছিলেন। তাতে সমস্যা নেই। অবাক হতে হল যখন ট্রেনে উঠে জয়তীরা দেখলেন সিটে বসিয়ে রাখা হয়েছে পোষ্যদের, অথচ দীর্ঘ আট ঘণ্টার পথ তাঁদের যেতে হল ট্রেনের মেঝেতে বসে।

[আরও পড়ুয়া: বারাণসীতে পদ্মঝড় নাকি সাইকেলের জয়? উত্তরপ্রদেশের শেষ দফা ভোটে নজর মোদির কেন্দ্রে]

দিল্লির বঙ্গ ভবনের লবির সামনে দাঁড়িয়ে সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে চোয়াল শক্ত হয়ে আসছিল জয়তীর। বলছিলেন, “শুরু থেকেই দূতাবাস হাত তুলে দিয়েছিল। স্পষ্ট বলেছিল, বর্ডার পার করতে না পারলে ওদের কিছু করার নেই। একবারের জন্য ভাবেনি কীভাবে সেই কাজটা করবে আমাদের মতো সাধারণ পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ডার থেকে যেসব ছবি, ভিডিও আসছিল, তা দেখেও দোটানায় ছিলাম। পরে ঠিক হল, এখানেও মরব, ওখানেও মরব। মেট্রোয় যাওয়ার পথে বারবার দেখছিলাম কোনও মিসাইল উড়ে আসছে না তো? মাইনাস ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর কষ্ট কী, তা বলে বোঝানো যাবে না। হাঙ্গেরি থেকে এখানে নিয়ে এসে হয়তো সরকার অনেকটাই সাহায্য করল, তবে যদি ওরা আমাদের ইউক্রেন থেকে উদ্ধারের কাজটা করত, সেটাই হত আসল সাহায্য। কারণ বর্ডার পার হওয়ার পরের কাজটা হিমশৈলর চূড়ার মতো।”

গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন তুললেন জয়তী। বলছিলেন, “আমি যেদিন কিয়েভ যাই, সেদিন নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছাড়েনি। ফিসফাসে শুনেছিলাম এই টেনশনের কথাই। আধঘণ্টা বাদে ফ্লাইট ছাড়ল। তার মানে নিশ্চয়ই সরকার বুঝেছিল যে, ওখানে কোনও সমস্যা আছে। কী করে এত বড় ভুলটা করল সরকার? তাহলে কি সঠিক তথ্য ছিল না ওদের কাছে? যদি সেই সময়ই আমাদের আটকে দেওয়া হত, তাহলে আমার মতো আরও অনেকের জীবনে এই সংকট আসতই না। সবচেয়ে বড় কথা, ওই সময় ইউক্রেন যাওয়ার টিকিটের দাম দ্বিগুণ, তিনগুণ বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের পক্ষে সেটার কারণ বোঝা সম্ভব ছিল না। সরকারও কি সেটা বুঝতে পারেনি?”

২১-এর রাত থেকে ২৪-এর ভোর। চারদিনেরও কম সময়ে তছনছ হয়ে গেল জয়তীর স্বপ্ন। অকারণে ঘুরে আসতে হল মৃত্যুপুরীর দুয়ার থেকে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এর দায় কার? শুধুই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের? ভারত সরকার, গোয়েন্দা বিভাগ-সহ অন্যান্য মন্ত্রক বা দফতর কি পুরোপুরি দায়মুক্ত?

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement