স্টাফ রিপোর্টার: ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর আজ বঙ্গ কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে জরুরি বৈঠক দিল্লিতে। বিকেল পাঁচটায় সেই বৈঠক থেকে বঙ্গ কংগ্রেসের মন বুঝে নিতে চাইছে এআইসিসি। সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে বৈঠক হওয়ার কথা। প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে যদিও এই মন বুঝে নেওয়া নিয়েই ধন্দ রয়েছে। তাঁদের সিংহভাগেরই বক্তব্য, যা পরিস্থিতি তাতে উপরের তলায় যা সিদ্ধান্ত হবে সেটাই পালন করতে বলে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রদেশের দাবি নিয়ে আলাদা করে আলোচনার সুযোগ কমই থাকবে। তার পরও কমপক্ষে ৫-৭টা আসনের দাবি নিয়ে দিল্লি যাচ্ছে প্রদেশ নেতৃত্ব।
প্রদেশ নেতৃত্বের এই অংশের বক্তব্য নিয়ে দ্বিমতও পোষণ করেছেন অনেকে। সদ্য কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন গোর্খা নেতা বিনয় তামাং। এই মুহূর্তে তিনি দিল্লিতে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে ইতিমধ্যে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গেও দেখা করেছেন। সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে যাবতীয় রিপোর্ট দিয়েছেন। দার্জিলিং আসন থেকে তাঁর কথা ভেবে রেখেছে প্রদেশ নেতৃত্ব। অন্যদিকে, রায়গঞ্জ বা মালদহের কোনও আসন থেকে ভাবনায় রয়েছে প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রামজের (ভিক্টর)। কয়েক মাস আগেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর নাম এখনই চূড়ান্ত নয়। দলের এক নেতার কথায়, “বিনয়, ইমরানের মতো মুখকে বসিয়ে রাখার জন্য নেওয়া হয়নি। বিনয়কে ইতিমধ্যে পাহাড়ের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দলে এই নামগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে।” দার্জিলিং, দুই মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, পুরুলিয়ার মতো কংগ্রেসের পুরনো শক্তিশালী আসনগুলি নিয়ে দর কষাকষি চলছে। পুরুলিয়ায় ভাবনা রয়েছে দলের প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতোর নাম নিয়ে।
ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের প্রাক্কালে কংগ্রেসকে মাত্র ৩টি আসন ছাড়া নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ আসনের সঙ্গে একটি রাজ্যসভার আসন নিয়ে আলোচনা চলছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনায় আরও ৩-৪টি আসনের কথা উঠেছে। এর মধ্যে পাহাড়ের ভোটের কথা মাথায় রেখে দ্রুত বিনয়কে সেখানে সংগঠন নিয়ে নেমে পড়ার কথা জানানো হয়েছে। দল তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। তবে জানুয়ারি মাসের আগে বিনয়ের পক্ষে দার্জিলিংয়ে পা রাখা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন তিনি। বিনয়ের কথায়, “আমি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সবটা জানিয়েছি। দল যেভাবে বলবে সেভাবেই কাজ হবে। তবে ২টো বা ৩টে আসনের বদলে আরও বেশ কিছু আসনে কংগ্রেসের সুযোগ রয়েছে। সেটা আলোচনায় থাকলে ভালো।”
এই পরিস্থিতিতে অন্তত ৫টা আসন কংগ্রেসকে ছাড়া উচিত বলে মত প্রদেশ নেতা শুভঙ্কর সরকারের। তবেই সেটা সম্মানজনক সমঝোতা হবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “সমঝোতা হলে সেটা সম্মানজনক পরিস্থিতিতে হোক। ২টো বা ৩টে আসনের বদলে কমপক্ষে ৫-৭টা আসন কংগ্রেসকে ছাড়া উচিত।” সেক্ষেত্রে দলের কর্মীদের আসন সমঝোতার সম্মাজনক পরিস্থিতির কথা বোঝানো যাবে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট-সহ দলের সংখ্যালঘু ভোটের সমর্থনও পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করেন শুভঙ্কর। প্রাক্তন বিধায়ক দলের আরেক সিনিয়র নেতার কথায়, “সমঝোতার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হলে সম্মানজনক আর কিছু থাকবে এই আশা রাখি না।”
বিনয় তামাং যেদিন কংগ্রেসে যোগ দিলেন সেদিনই অধীরের আমন্ত্রণে সেই সভায় এসেছিলেন জন আন্দোলন পার্টির নেতা পাহাড়ের রাজনীতির একদা চাণক্য হরকা বাহাদুর ছেত্রী। তিনি জানাচ্ছেন, পাহাড়ের যা পরিস্থিতি তাতে সবটা এখনই বলে ফেলা সম্ভব নয়। সেখানে ৫-৬টি দল বিজেপির সঙ্গে আছে। তবে তাদের পাহাড়ের মানুষকে নিয়ে চলতে হয়। আর পাহাড়ের মানুষ স্পষ্ট কথা শুনতে চায়। বিজেপি যেটা কখনওই বলেনি। তাদের প্রতিশ্রুতি নয়, সিদ্ধান্ত শুনতে চেয়েছিল মানুষ।” এই পরিস্থিতিটাকে যে দল কাজে লাগাতে পারবে লাভ তাদের বলে মনে করেন হরকা। তবে সেই সুযোগ এখনই কংগ্রেস তৈরি করতে পারবে বলে মনে করেন না তিনি। ফলে দার্জিলিং আসন জেতা অন্তত কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন হরকা। কংগ্রেসেরও একটি অংশ এই মতকে সমর্থন করছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.