বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বিপুল জয়ের পর পাঁচদিন ধরে চলছিল টানাপোড়েন। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে কে বসবেন প্রবীণ সিদ্দারামাইয়া নাকি ভোট ম্যানেজার ডে কে শিবকুমার? দফায় দফায় বৈঠক করেও দুইনেতাকে তাঁদের অবস্থান থেকে সরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, রণদীপ সিং সুরজেয়ালাদের। শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ৭৫ বছর বয়সি সিদ্দারামাইয়াকেই কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছে কংগ্রেস। দ্বিতীয়বারের জন্য কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন সিদ্দারামাইয়া। উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন শিবকুমার।
সেইসঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব পাওয়ার পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠে বিধায়কদের মন্ত্রিসভার সদস্য করা হবে বলে হাইকমান্ড কথা দেওয়ায় নিজের অবস্থান বদল করেন কর্ণাটক কংগ্রেসের ভোট ম্যানেজার। এখানেই শেষ নয়। ‘২৪ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বও পালন করবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সিদ্দারামাইয়া দায়িত্ব পেতেই তাঁকে অভিনন্দন জানান সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী। তাঁর মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিজেপি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের। তালিকার প্রথমেই রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর পরিবর্তে প্রতিনিধি হিসেবে সিদ্দারামাইয়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কে যাবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। মমতার পাশাপাশি শরদ পওয়ার, অখিলেশ যাদব, কেসিআরের মতো শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।
২০১৩ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সিদ্দারামাইয়া। এবার আবার পুরনো চেয়ার ফিরে পাচ্ছেন তিনি। মাইসুরু জেলার সিদ্দারামানাহুন্ডি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সিদ্দারামাইয়া। মাইসুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হন এবং সেখানে থেকেই আইনের ডিগ্রিও অর্জন করেছিলেন। অল্প সময়ের জন্য তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজও করেছিলেন। রাজনীতিতে পা রাখার আগেই তিনি মাইসুরু এলাকার কৃষকদের কন্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘কৃষকদের উকিল’ হিসেবে। সিদ্দারামাইয়া ও তাঁর স্ত্রী পার্বতীর দুই সন্তান ছিল বড় ছেলে রাকেশ কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। ছোট ছেলে যথীন্দ্র, একজন ডাক্তার।
দীর্ঘদিন সিদ্দারামাইয়ার নামের পাশে ‘ডানপন্থী’ রাজনৈতিক কর্মীর তকমা লেগেছিল। সিদ্দারামাইয়া রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন জনতা পার্টির হয়ে। ১৯৮৩ সালের কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনেই তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ‘ডানপন্থী’ তকমার কারণেই তাঁকে টিকিট দেননি জনতা পার্টির তৎকালীন সভাপতি এইচ ডি দেবেগৌড়া। তাঁর রাজনৈতিক গুরু আব্দুল নজির সাবের পরামর্শে ভারতীয় লোক দলের সমর্থনে চামুন্ডেশ্বরী কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন সিদ্দারামাইয়া। যে চামুন্ডেশ্বরী কেন্দ্র পরবর্তীকালে তাঁর ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এবারও সেই কেন্দ্র থেকেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সিদ্দারামাইয়া।
৫ বছর পর ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি। কংগ্রেসের এবারের নির্বাচনী সাফল্যে ডি কে শিবকুমারের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সিদ্দারামাইয়াও। এবারও যদি ৫ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেন তিনি, তাহলে ইতিহাস গড়বেন তিনি। কারণ কর্ণাটকে এখনও পর্যন্ত কোনও নেতাই শীর্ষ পদে দুই পূর্ণ মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। বিএস ইয়েদুরাপ্পা চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু একবারও পূর্ণ মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.