সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার পয়েন্ট এবং দেপসাং উপত্যকা থেকে সেনা সরাতে রাজি নয় চিন। ভারত ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের আগের অবস্থানে অর্থাৎ ৫ মে’র আগেকার অবস্থানে সরে যেতে নারাজ পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA)। রবিবার পঞ্চম দফার সেনা বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি।
ভারতীয় সেনাকর্তাদের মতে, সেনা অপসারণ নিয়ে অহেতুক টালবাহানা করে চিনা সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্নায়ুর পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (LAC) পেরিয়ে
ভারতীয় এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে চিনারা। এলএসি’র সীমানাটাই বদলে দিতে চাইছে চিন। ‘এখনই নিঃশর্তে চিনকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে’ বলে ভারতের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও কাজের কাজ কিছু হয়নি। শুধু মাত্র গালওয়ান, হটস্প্রিং, ফিঙ্গার এরিয়া ফোর থেকে সেনা অপসারণ করেছে পিএলএ। গোগরা, প্যাংগং, দেপসাংয়ে চিনা সেনার অবস্থান ও পরিকাঠামো বহাল তবিয়তেই আছে। এই অবস্থায় ভারতীয় সেনার কমান্ডারদের ‘সর্বোচ্চ যুদ্ধ প্রস্তুতি’ নিয়ে রাখার নির্দেশে দিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারভানে (Manoj Mukund Naravane)। তাঁর এই নির্দেশে সবুজ সংকেত রয়েছে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ তথা সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াতেরও।
গত দু’দিনে অসমের তেজপুরে সেনার ৪ নম্বর কোরের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন নারভানে। শুক্রবার লখনউয়ে সেনাবাহিনীর (Indian Army) সেন্ট্রাল কমান্ডের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন তিনি। সেনাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন। প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গত কয়েকদিনে তিনি লাদাখ থেকে অসম পর্যন্ত কার্যত চষে বেড়িয়েছেন। সেনার ইস্টার্ন কমান্ডে সফরের সময় সেনাপ্রধান নারভানেকে সিকিম, অরুণাচলের সঙ্গে চিন লাগোয়া সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন সেনা কমান্ডাররা। সেনাকর্তাদের রিপোর্টে এবং উপগ্রহ চিত্রে পাওয়া ছবি অনুযায়ী, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, সিকিম, অরুণাচল সীমান্তে যুদ্ধাস্ত্র সমেত বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে লালফৌজ। সম্ভাব্য যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেই লাদাখ সীমান্তে কম্বাইন্ড আর্মি ব্রিগেড নিয়ে ইন্টিগ্রেডেড ব্যাটল গ্রুপ তৈরি করেছে চিন। ভারতও অজস্র ঘাতক প্লেটুন-সহ ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। আরও বাড়তি ৩৫ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে। ফলে সেনাপ্রধান জেনারেল নারভানে কমান্ডারদের ‘সর্বোচ্চ যুদ্ধ প্রস্তুতির’ নির্দেশ দেওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে, ভারত কি তাহলে জমি পুনরুদ্ধার করতে নিরুপায় হয়ে সেনা অভিযানে নামতে বাধ্য হবে? কয়েকজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কিন্তু বলছেন অন্য কথা।
তাঁদের মতে, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এখন কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়েছে শেয়ার বাজার। ঘুরে দাঁড়ানোর একটা চেষ্টা করছে বাজার। লকডাউন, করোনার ভয় ভেঙে বাজার এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। এই অবস্থায় স্বল্প মেয়াদের বা দীর্ঘ মেয়াদের যুদ্ধে যাওয়াটা ঝুঁকির। কারণ তাতে আখেরে ক্ষতি হবে সরকারের রাজকোষেরই। শত্রু যখন চিন, তখন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে কিনতে বিপুল গোলাবারুদ, যুদ্ধাস্ত্র। তাছাড়া রাশিয়া, আমেরিকা দুই মহাশক্তি সবুজ সংকেত না দিলে ভারতের পক্ষে জমি উদ্ধারের জন্য একতরফা অভিযান চালানোর সম্ভাবনা কম। প্যাংগং, দেপসাং এলাকায় চিনা ফৌজকে হটাতে গেলে রাশিয়ার সমর্থন থাকা ভীষণ জরুরি। ফলে লাদাখের জমি উদ্ধারে কারগিলের মতো সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি তলে তলে নিয়ে রাখছে ভারতীয় সেনা। একইসঙ্গে চলছে আলোচনার মাধ্যমে চিনকে বাধ্য করানোর চেষ্টাও। কিন্তু ম্যারাথন আলোচনাপ্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে চূড়ান্ত সংঘাতে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.