সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাজারে নগদ টাকার জোগান কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে করছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ৷ তাই গ্রাহকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে আজ, শনিবার ব্যাঙ্কগুলি শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব গ্রাহক ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নোট বদলের ব্যবস্থা করছে৷ অর্থাৎ, কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টহোল্ডার ও প্রবীণ নাগরিক ছাড়া অন্য কোনও গ্রাহক পুরনো পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বদলে দু’হাজার, একশো, পঞ্চাশ বা অন্য কোনও নোট নিতে পারবেন না শনিবার৷ অবশ্য ব্যাঙ্কের অন্যান্য কাজকর্ম, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা ও জমা দেওয়ার কাজ স্বাভাবিক নিয়মে চলবে৷
ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান রাজীব ঋষি বলেন, গোটা দেশের যে ছবিটা আমাদের সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, নোট বদলের চাহিদা কিছুটা হলেও কমেছে৷ তাই শনিবার শুধু ব্যাঙ্কের নিজস্ব গ্রাহক ও প্রবীণদের জন্যই পুরনো টাকা বদলে দেওয়ার কাজ হবে৷ ব্যাঙ্কের অন্য কাজকর্ম, বকেয়া কাজ সেরে ফেলার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে৷ সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ২০০০ টাকা পর্যন্ত পুরনো নোট বদল করা যাবে৷ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কড়া পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকও৷ পাঁচশো, হাজারের পুরনো নোট অন্যের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে সাদা করার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল৷ অর্থমন্ত্রক এদিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, কেউ যদি নিজের অ্যাকাউন্ট অনৈতিক কাজের জন্য ব্যবহার করতে দেন, তাঁকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে৷ কর ফাঁকি দিতে যাঁরা অন্যের অ্যাকাউণ্ট ব্যবহার করছেন, তাঁদের উপর আর্থিক জরিমানা তো লাগু হবেই৷ একই সঙ্গে যাঁরা অন্যকে এই সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে আইনি পদক্ষেপ৷ কারণ, আয়কর আইনে সেটা অবৈধ৷ নির্দেশিকা জারি করে শুক্রবার দেশবাসীকে এ মর্মে সতর্ক করল অর্থমন্ত্রক৷
অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অনেকেই নিজেদের হিসাববহির্ভূত অর্থ সেখানে গচ্ছিত রাখছেন সুকৌশলে৷ যাতে পরে যখন তাঁরা সেখান থেকে টাকা তুলবেন, তখন তাঁরা তার সবটাই পাবেন নতুন নোটে৷ এভাবেই সমস্ত কালো টাকা খুব সহজে বদলে ফেলা যাবে সাদা অর্থাত্ বৈধ টাকায়৷ কেউ কেউ তো আবার অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এই কাজ করার জন্য তাঁদের হাতে রীতিমতো পুরস্কার-উপহারও গুঁজে দিচ্ছেন৷ দেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশনও৷ এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘জন-ধন অ্যাকাউণ্ট’-এর ক্ষেত্রেও এই ধরনের ঘটনা আকছার ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে৷ এই পরিস্হিতি আটকাতেই হুঁশিয়ারি জারি করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে৷ অর্থমন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, ‘‘এভাবে যাঁরা আয়কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের উপর আর্থিক জরিমানা ধার্য করা হবে, যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে তাঁরা অন্য কারও অ্যাকাউন্টে নিজেদের টাকা রেখেছেন৷ একইভাবে, যাঁরা নিজেদের অ্যাকাউন্ট এই অনৈতিক কাজ করার জন্য অন্যকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন, আয়কর আইনের আওতায় তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে৷” নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে যে, কালো টাকার সমস্যাকে দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে জনগণের সার্বিক সহযোগিতা সরকারের প্রয়োজন৷ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, কারিগর-কর্মী এবং গৃহবধূদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখা স্বল্প অঙ্কের আর্থিক পুঁজি আয়কর তদন্তের আওতায় আসবে না, যদি তা ২.৫ লক্ষ টাকার কর অব্যাহতি সীমার আওতায় পড়ে৷ জন ধন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহক ব্যাঙ্কে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারেন৷
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে আচমকাই জল্পনা শুরু হয় যে, নোট বদলের প্রক্রিয়ায় স্হগিতাদেশ প্রয়োগ করার কথা ভাবছে কেন্দ্র৷ তার জেরে দিনভর আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ল দেশজুড়ে৷ আরও জানানো হয়েছিল যে, আগামী ২৪ বা ২৫ নভেম্বর ওই সংক্রান্ত ঘোষণা হতে পারে৷ কিন্তু সব জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে অর্থমন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকরা এই খবরের সত্যতা খারিজ করে দিয়েছেন৷ তাঁদের দাবি, যেভাবে ১০ নভেম্বর থেকে নোট বদল চলছে, আগামী দিনেও সেভাবেই তা চলবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.