Advertisement
Advertisement

Breaking News

অসম, উলফা

‘বুলেটের জবাব ব্যালটে’, দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় বুক বাঁধছে অসমের বাঙালিরা

বিজেপিতে ভরসা রেখে ভোট দিতে মুখিয়ে গ্রামবাসীরা৷

Ballot is the tool of protest, say people of Dhola, Assam
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 8, 2019 8:55 pm
  • Updated:August 21, 2020 1:57 pm  

মণিশংকর চৌধুরি, তিনসুকিয়া: নির্জন চা বাগান এলাকা৷ এবড়োখেবড়ো রাস্তা ধরে যাওয়ার পথে দু-একটা দোকান চোখে পড়ে মাত্র৷ জায়গাটা অসমে৷ তিনসুকিয়া শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার ভিতরে ৩৭ নং জাতীয় সড়কের পাশে ছোট্ট এক জনপদ – ধোলা৷ গতবছর নভেম্বর মাসে এক রাতের ঘটনা এক লহমায় যেন দিনের আলোয় চলে এসেছিল তিনসুকিয়ার এই ছোট্ট জায়গা৷ ৫ বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল উলফা জঙ্গিরা৷

[ আরও পড়ুন: রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তুলে আত্মহত্যার পথে যুবক, পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার]

তারপর কেটে গিয়েছে চার মাস৷ সেই ক্ষত শুকোয়নি এখনও৷ সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের মতো জাগতিক নিয়মে দিন কাটছে৷ এসবের মধ্যে চলে এসেছে গণতন্ত্রের আরেক উৎসব৷ লোকসভা নির্বাচন ২০১৯৷ আরেকটি সরকার গঠন৷ যে সরকারের উপর অঢেল ভরসা এই প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের৷ তার আগে উলফা সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত ধোলার মানুষজন কী ভাবছেন? কী প্রত্যাশা? এসব জানতে, বুঝতে ধোলা মোড় থেকে বাঁদিক ঘুরে ঢুকে পড়লাম খেরবাড়ি গ্রামে৷ নির্জন এলাকা৷ খুব বেশি হলে সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস৷ সকলেই বাঙালি৷ আশেপাশে অসমীয়া, নেপালিদের বসতি৷ রয়েছেন আদিবাসীরাও৷

Advertisement

ঘুরতে ঘুরতে বোঝা গেল, গত বছরের নৃশংস জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছিলেন এই গ্রামেরই ৫ জন৷ দোসরা নভেম্বর, ২০১৮৷ সন্ধেবেলা চায়ের দোকানে বসেই গল্পগুজব করছিলেন কাকা শ্যামল বিশ্বাস, দুই ভাইপো বছর আঠেরোর অনন্ত এবং একুশ বছরের অবিনাশ৷ সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন – সুবল দাস, ধনঞ্জয় নমশূদ্র, সহদেব নমশূদ্র৷ শ্যামল আর সুবল ষাটোর্ধ্ব৷ বাকিদের বয়স ১৮ থেকে ২৭এর মধ্যে৷ শীতের সন্ধে আড্ডা বেশ জমে উঠেছিল৷ এমনই সময়ে ৫ থেকে ৬ জন সেনার উর্দি পরা লোক এসে তাঁদের ডেকে নিয়ে যায়৷ সেনা ভেবেই তাঁদের সঙ্গে নিশ্চিন্তে চলে গিয়েছিলেন ৫ জন৷ এরপর ঢোলা মোড়ের কাছে অন্ধকার জায়গায় ঘটে গেল নৃশংস ঘটনা৷ কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাঁদের হাত বেঁধে চলল এলোপাথাড়ি গুলি৷ ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া শরীরগুলো একে একে লুটিয়ে পড়েছিল নালার পাশে৷ কান ঘেঁষে গুলি বেরিয়ে গিয়েছিল সহদেবের৷ অচৈতন্য হয়ে পড়া সহদেবকে দেখে জঙ্গিরাও ভেবে নিয়েছিল, সে মৃত৷ সেদিন কপালজোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল সহদেব৷

                                     [ আরও পড়ুন: বিজেপির ইস্তেহারে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির উল্লেখ, ‘আজাদি’র পক্ষে সুর চড়ালেন নেতারা]

এ গল্পের কিছুটা আগেও শোনা৷ এবার খেরবাড়িতে পা দিয়ে শুনলাম গোটা বৃত্তান্ত৷  খোঁজখবর নিয়ে পৌঁছেও গেলাম নিহতদের পরিবারের কাছে৷ জানা গেল, সেদিন অত  গুলির শব্দ শুনেও কেউ বাড়ির বাইরে বেরোননি৷ এ তল্লাটে গুলির শব্দ স্বাভাবিক৷ তবে সেদিনের গুলি যে সেনার নয়, জঙ্গির – তা বোঝার আগেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে৷ এত বড় একটা ঘটনার পরও নিরাপত্তা তেমন কিছু চোখে পড়ে না খেরবাড়িতে৷ ফাঁকা, শুনশান গ্রাম৷ তাই এখন আর নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবেনও না৷ নিহত শ্যামল, অনন্ত, অবিনাশদের পরিবারের বৃদ্ধা সদস্য বলছেন, ‘জঙ্গিদের ভয় সঙ্গে নিয়েই আমরা আছি৷ কিন্তু তবু বলছি, বিজেপিই আবার আসুক৷ তারা অন্তত নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে৷ আমাদের বড় ভরসা যুগিয়েছে৷’

tinsukiya-n

সেদিনের জঙ্গি হামলা থেকে বেঁচে ফেরা সহদেব নমশূদ্রের গলাতেও একই সুর৷ যুবক সহদেব বলছে, ‘নিরাপত্তা নিয়ে আর ভাবিত নই৷ বিজেপি সরকার তবু আমাদের উন্নয়ন করেছে৷ চাকরির আশ্বাস দিয়েছে৷ বিজেপি ছাড়া আর কাকেই বা বেছে নেব? কংগ্রেস সরকার এতদিন ধরে আমাদের জন্য কিচ্ছু করেনি৷’ প্রশ্ন করলাম,‘জঙ্গি দমনে সরকারের ভূমিকা কতটা সদর্থক বলে মনে করছেন? বিজেপির আমলেই তো আপনাদের উপর এমন একটা হামলা হল৷’ শান্ত সহদেবের চোখ সহসাই জ্বলে উঠল৷ ঠান্ডা গলায় উত্তর দিল, ‘নতুন সরকার তৈরিই আমাদের প্রতিবাদ৷ জঙ্গিদের অস্ত্রের মোকাবিলায় আমাদের জন্য রয়েছে ভোটবাক্স৷ সেখানেই যাবতীয় হামলার জবাব দেব৷’ ব্যস, এর চেয়ে স্পষ্ট জবাব আর হয় না৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement