স্টাফ রিপোর্টার: কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অথবা ১০০ শতাংশ নিরাপদ কিংবা নিরাময়ের গ্যারান্টি। এই সব দাবি দিয়ে প্রচুর বিজ্ঞাপন দেয় বিভিন্ন আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি, সিদ্ধা, ইউনানি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা। এমন ধরনের বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে দেশের নাগরিকদের সতর্ক করল আয়ুষ মন্ত্রক (Ayush ministry)।
ঘটনার সূত্রপাত, পতঞ্জলি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কঠোর নির্দেশ থেকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কঠোর মনোভাবের পর এবার এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচারের মুখোশ খুলে দিতে উদ্যোগী হল কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তারা। সেই বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে এমন ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপার ব্যাপারে প্রিন্ট মিডিয়াকে সতর্ক করল প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া।
কী বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকায়? প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক অনুমোদিত বা সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত বলে দাবি করে অনেক আয়ুর্বেদ (Ayurvedic) ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। কিন্তু বাস্তব হল, ওষুধের অনুমোদন আয়ুষ মন্ত্রক দেয় না, দেয় রসায়ন ও সার মন্ত্রকের অধীন কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক কন্ট্রোল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া। তাই কোনও ওষুধের লেবেলে কিংবা বিজ্ঞাপনে যদি কোনও কোম্পানি ‘অ্যাপ্রুভড/সার্টিফায়েড বাই মিনিস্ট্রি অফ আয়ুষ’ উল্লেখ করে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি। তাই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ছাপার ব্যাপারেও সংবাদপত্র কিংবা পত্রিকাগুলিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে প্রেস কাউন্সিল। সবুজ লোগো এবং ১০০% ভেজিটেরিয়ান দাবিকেও ঠিক নয় বলে জানিয়েছে আয়ুষ।
গত মাসেই এমন ধরনের নানা অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও অবৈজ্ঞানিক দাবি সংবলিত বিজ্ঞাপনের জন্য দেশের শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন রামদেব এবং তাঁর সংস্থা পতঞ্জলি। সুপ্রিম রোষের মুখে পড়ে তাঁদের ক্ষমাও চাইতে হয়। শুধু আদালতের কাছে মৌখিক ক্ষমা নয়, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁদের স্বীকার করতে হয়েছিল যে, তাঁদের করা বিজ্ঞাপনি দাবিগুলি ষোলো আনা অসত্য। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকেও এ নিয়ে কড়া হওয়ার নির্দেশ দেয়। তার পরই ১৯৫৪ সালের ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিজ অ্যাক্টের ধারা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আয়ুষ মন্ত্রক। আর তা নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রেস কাউন্সিলও।
তাতে মনে রাখতে বলা হয়েছে, আয়ুষ মন্ত্রক কোনও ম্যানুফ্যাকচারিং লাইসেন্স ইস্যু করে না। তার লাইসেন্স ইস্যু করে কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ামক সংস্থা, ১৯৪৫ সালের ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স রুল মেনে। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের অধীন ড্রাগ কন্ট্রোল থেকেও যে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়, সেগুলির সঙ্গেও আয়ুষ মন্ত্রকের কোনও সম্পর্ক নেই।
ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স রুলের ১৬১, ১৬১-এ, ১৬১-বি এবং ১০৬-এ বিধিতে বলা রয়েছে যথাক্রমে আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথি ওষুধের লেবেলে কী লেখা থাকতে পারে, কী লেখা থাকার কথা নয়। এবং সেগুলির বিজ্ঞাপন কেমন হবে, তা-ও বলা রয়েছে ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিজ আইনে।
এখানেই শেষ নয়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ও লেবেলিং নিয়ে যে ২০১৯ সালের ক্রেতাসুরক্ষা আইন, ১৯৯৬ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক অ্যাক্ট এবং ১৯৫০ সালের এমব্লেমস অ্যান্ড নেমস (প্রিভেনশন অফ ইমপ্রপার ইউজ) অ্যাক্টেও বিশদে বলা রয়েছে এ সব সম্পর্কে। এত সব নিয়মকানুন মেনে বিজ্ঞাপনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে আয়ুষ। অন্যথায় বিভ্রান্তিকর ও অবৈজ্ঞানিক দাবির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা এই বিজ্ঞপ্তিকে স্বাগতই জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, অ্যালোপ্যাথি হোক বা আয়ুষ, এমন কোনও ওষুধ হয় না, যা ১০০% নিরাপদ এবং কোনও রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আমজনতার সে বিষয়টা অবশ্যই বোঝা দরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.