নব্যেন্দু হাজরা: জিরিকা, আদ্রক, ধন্যা, মাধ্য। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? সাদা বাংলায় এগুলো পরিচিত জিরে, আদা, ধনে, মধু নামে। করোনা রুখতে ভারতীয় ভেষজের উপরেই ভরসা রাখতে বলছে কেন্দ্রীয় আয়ুশ মন্ত্রক। সুপ্রাচীন সেই ভেষজ সম্পদ, যার ব্যবহারে মহর্ষি সুশ্রুত-চরকের সময় থেকে রোগব্যাধি মুক্ত থাকছেন এই উপমহাদেশের মানুষ।
সম্প্রতি ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ুশ মন্ত্রক। পরামর্শে বলা হয়েছে, নিত্যদিনকার ঘরোয়া সামগ্রী ব্যবহারে কীভাবে ঠেকানো যাবে ভয়ংকর কোভিড-১৯ (COVID-19) ভাইরাসকে। এই পরামর্শ মানতে অবশ্য কোনও ঝঞ্ঝাটও নেই। কারণ, গ্রামীণ ভারতে দীর্ঘদিন ধরে মা—ঠাকুরমারা যে সমস্ত টোটকা বা ঘরোয়া ওষুধ ব্যবহার করে আসতেন, সেগুলিকেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফ থেকে। যেমন, আয়ুশ মন্ত্রকের পরামর্শ, আমিষ হোক বা নিরামিষ, লকডাউনের বাজারে রান্নায় বেশি করে দিন হলুদ, রসুন, জিরে আর ধনে। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
চা বা পুদিনাপাতার মতো অতি পরিচিত খাদ্য বা পানীয়সামগ্রীরও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে মন্ত্রক। বলেছে, রোজ দিনে দু’বার করে ভেষজ চা পান করুন। তবে সেই চা আবার দুধ বা লিকার চা নয়, আদা চা। শীত বা বর্ষাকালে সর্দি—কাশিতে যে চায়ের ব্যবহার বহু প্রচলিত। আয়ুশ চিকিৎসকদের বক্তব্য, আদা চায়ে ঔষধি গুণ অনেক! এই পানীয় অনেকটাই শরীরকে চাঙ্গা রাখবে। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত রোগের ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই আদা চায়ের জুড়ি মেলা ভার। করোনা ভাইরাস যেহেতু মানুষের শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে তাই শ্বাসযন্ত্রের শক্তি বাড়াতে আদা চা পানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনা সংকটের সময় নিজে থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এরকম একাধিক আয়ুর্বেদিক পন্থার কথা বলেছে আয়ুশ মন্ত্রক। যা মেনে চললে ঘরে বসেই নিজের শরীরকে যে কোনও ধরনের অসুখ থেকে অনেকটাই দূরে রাখতে পারবেন দেশবাসী। যেমন, তাদের পরামর্শ, প্রতিদিন সকালে ১০ গ্রাম করে চবনপ্রাশ খান। তবে সেক্ষেত্রে যদি কারও ডায়াবেটিস থাকে, তাঁকে সুগার ফ্রি চবনপ্রাশ খেতে বলা হচ্ছে। আয়ুশ মন্ত্রকের দাবি, শরীরের পক্ষে সব থেকে উপকারী হল দিনে যত বেশিবার খুশি গরম জল খাওয়া। তবে শুধু খাওয়া—দাওয়াতেই নিয়মবিধি বেঁধে রাখেনি আয়ুশ মন্ত্রক। নিয়মিত যোগব্যায়াম করতেও বলা হয়েছে প্রত্যেককে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে যোগাসন, প্রাণায়াম এবং মেডিটেশনের দাওয়াই দিয়েছেন আয়ুশের চিকিৎসকরা। এমনকী, নারকেল তেল বা ঘি সকালে ও সন্ধ্যায় নাকের ছিদ্রে দিলে উপকার পাওয়া যাবে। তাও বলা হয়েছে।
শুকনো কাশি হলেও বাড়িতে বসে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কীভাবে তা সারাবেন, তাও কেন্দ্রের আয়ুশ মন্ত্রকের পরামর্শে রয়েছে। আর এক্ষেত্রে গরমজল দিয়ে ভাপ নেওয়াটা খুব জরুরি। দিনে একবার গরম জলে পুদিনা পাতা ফেলে ভাপ নিতে বলছেন আয়ুশ চিকিৎসকরা। সঙ্গে দিনে দু’—তিনবার লবঙ্গ পাউডারের সঙ্গে প্রাকৃতিক মধুও খাওয়া যেতে পারে। এভাবে দিন কয়েক যদি নিয়ম মেনে খাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে শুকনো কাশি ও গলাব্যথা দূর হবে। তা না হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে আয়ুশ মন্ত্রকের তরফে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.