সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অসাধ্য সাধন। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিতর্কিত, জটিল, স্পর্শকাতর অযোধ্যা মামলার রায় দিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটিয়েই বোধহয় জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে গেলেন। বলা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের কথা। অবসরের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে অযোধ্যার জমি বিতর্কে ইতি টেনে নিজের কৃতিত্ব আলাদাভাবে রাখলেন উত্তর-পূর্বের এই বিচারপতি।
মোটের উপর সাদামাটা কেরিয়ার। তেমন চমক নেই। অসমের ডিব্রুগড়ের ভূমিপুত্র রঞ্জন গগৈয়ের দিল্লিতে এসে পড়াশোনা কলেজ জীবনে। ইতিহাসে স্নাতকের পর আইনি ডিগ্রি নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু সাধারণভাবেই। মোড় ঘোরা শুরু হল ২০১০ সাল থেকে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর থেকে কেরিয়ারে উত্থান। ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। ছ বছর পর, ২০১৮এ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর অবসরের পর সেই চেয়ারে বসেন গগৈ। তিনিই প্রথম উত্তরপূর্ব ভারতের বিচারপতি, যিনি দেশের প্রধান বিচারপতির আসন আলো করেছেন।
এর কিছুদিন আগে, সেই সময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রকে নিয়ে অন্যান্য বিচারপতিদের মধ্যে নজিরবিহীনভাবে শুরু হওয়া দ্বৈরথে বেশ সক্রিয়ভাবেই অংশ নিয়েছিলেন গগৈ। তবে দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির পদে উন্নীত হওয়ার পরপরই তাঁর জীবনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের শুরু। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ভবিষ্যতের ভিত্তি। অসমের এনআরসি প্রক্রিয়া চলাকালীন তাঁর এই মন্তব্য করে অনেকের কাছেই বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তবে এনআরসি-র প্রয়োজনীয়তা একটা দেশের জন্য কতটা জরুরি, তা বেশ বুঝিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। মূলত তাঁর এই মনোভাবের কারণে দেশজুড়ে এনআরসির দাবি তুলেছে বিজেপি।
সে যাই হোক, ১৭ নভেম্বর অবসরের আগে গগৈয়ের প্রধান ভার ছিল অযোধ্যা মামলার রায়দান করে দেশের ইতিহাসের এত বড় বিতর্কের অবসান ঘটানো। শুক্রবার তিনি সেই কাজে সফল হলেন। ঐতিহাসিক ভূমি নিয়ে সমস্ত বিতর্ক শেষ হল একদা ইতিহাসের ছাত্র রঞ্জন গগৈয়ের হাত ধরে। সে কাজে তাঁকে সাহায্য করে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় রাখলেন আরও চার বিচারপতি – এস এ বোবদে (যিনি পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন), বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস এ নাজির।
শান্তিপূর্ণভাবে, বিচক্ষণতার সঙ্গে অযোধ্যা জমি বিতর্ক শেষ করে দেওয়া রঞ্জন গগৈয়ের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলেও এখনও তাঁর সামনে বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষায় রাফালে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা, শবরীমালা মন্দিরে নির্দিষ্ট বয়সের মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সংক্রান্ত মামলা এখনও গগৈয়ের বিচারাধীন। হাতে সময় কম। মাত্র সপ্তাহখানেক। তাই এসব ক্ষেত্রে তাঁর বিচার কেমন হবে, সেদিকেও নজর দেশবাসীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.