স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রের তথ্যেই বিপাকে বিজেপির দুই ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’। দেশের গরিব মানুষের অধিকার ঠিকভাবে না দেওয়ার শীর্ষে যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) উত্তরপ্রদেশ। তার ঠিক পরের আসনেই প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাট।
কোনও বিরোধী দলের দাবি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা নয়, চাঞ্চল্যকর এই তথ্য সম্প্রতি সংসদে পেশ করেছে খোদ কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও উপভোক্তা বিষয়ক এবং গণবণ্টন মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যম থেকে দেশজুড়ে গণবণ্টন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ৯৯৮টি অভিযোগ এসেছে। যার মধ্যে তালগাছের মতো বাকি সবাইকে পিছনে ফেলে শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh)। শুধুমাত্র যোগীরাজ্য থেকেই ৩০৭টি এই ধরনের অভিযোগের ঘটনা সামনে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গুজরাট থেকে এসেছে ১১৭টি অভিযোগ। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ডের মতো অন্যান্য ডবল ইঞ্জিন সরকারও অভিযোগের দৌড়ে রয়েছে প্রথম দিকেই।
২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০টি এই ধরনের অভিযোগ সামনে এসেছে। যার মধ্যে শুধু উত্তরপ্রদেশ থেকেই এসেছে ১,৭৪৬টি অভিযোগ। যা মোট অভিযোগের ৩০ শতাংশেরও বেশি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও উপভোক্তা বিষয়ক এবং গণবণ্টন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৭৯৮টি অভিযোগ সামনে এসেছে। ২০১৫-র জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে দু’ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬৪০ বার তল্লাশি হয়েছে। যেখানে ৪২ হাজার ২৭৪ জনকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে। ৮৬ হাজার ৭১৫টি রেশন দোকানের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে বিজেপি শাসিত সরকারগুলির দুর্নীতির এই ছবি সামনে চলে আসার প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy) বলেন, “এতেই তো প্রমাণ হয়ে যায়, ওদের পুরোটাই শুধু ফাঁকা আওয়াজ। আসলে সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হল বিজেপি (BJP)। যেসব রাজ্যে ওরা ক্ষমতায়, সেখানেই দুর্নীতি। আমি আর কী বলব! কেন্দ্র সরকারের তথ্যই তো আমাদের সবটা বলে দিচ্ছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের (Sukhendu Sekhar Roy) বক্তব্য, “বাংলায় নাকি ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে, তাই অনুদান বন্ধ। কেন্দ্রের তথ্যে তো দেখা যাচ্ছে গণবণ্টনে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে সবথেকে বেশি দুর্নীতি। তাহলে ওখানে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? আসলে ওদের মতে, বিজেপির সবাই ঈশ্বরের সন্তান, বিরোধীরা দুর্নীতিগ্রস্ত। ওরা একদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর স্লোগান দেয়, অন্যদিকে বিরোধীদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করে। এই তথ্য এর সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ। একদিকে নিজেদের শাসনে থাকা দুর্নীতির মগডালে বসে থাকা উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাটের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য বাংলার মানুষকে ভাতে মারার চক্রান্ত করা হয়।”
লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) বক্তব্য, “শুধু এই তথ্যের কথা বলছেন? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো থেকে যে কোনও সরকারি তথ্য দেখুন, স্পষ্ট হয়ে যাবে উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে বিজেপি শাসিত প্রত্যেকটা রাজ্য দুর্নীতিগ্রস্ত। ওরা নিজেরাই নিজেদের স্বচ্ছ দাবি করে ঢাক পেটায়। বাস্তবটা যার ঠিক উলটো।” সিপিএমের (CPIM) রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখানে বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের সরকার আছে আর দুর্নীতি নেই। ওরা খালি গুজরাটের কথা বলে, অথচ ওখানে তো নাগরিকদের মৌলিক অধিকারটুকুও নেই। যেখানে বিরোধী স্বরকে গলা টিপে হত্যা করা হয়, সেখানে আবার কীসের স্বচ্ছতা?” সংসদের প্রথা মেনে সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বা ভুয়া তথ্য দেওয়া যায় না। হয়তো সেই কারণেই সত্যি চাপা দিতে পারেনি কেন্দ্র। এই তথ্যকেই হাতিয়ার করছে বিরোধীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.