সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোট আসে, ভোট যায়। সমর্থকরা স্বপ্ন দেখেন এবার কংগ্রেস (Congress) ঘুরে দাঁড়াবে, জিতুক না জিতুক, অন্তত বিজেপিকে সমানে সমানে টক্কর দেবে। ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় সেসবই ছিল অলীক কল্পনা। আগের থেকে আরও অন্ধকারে ডুবছে দেশের সবচেয়ে পুরনো দল।
সেই ২০১৪ সাল থেকে যেভাবে একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেস যেভাবে ধরাশায়ী হচ্ছে, সেই ধারা বজায় রইল ২০২২ সালের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনেও। যে পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে কংগ্রেস একটিতে ক্ষমতায় ছিল, ২টিতে ২০১৭ সালে একক বৃহত্তম দল হিসাবে উঠে এসেছিল এবং একটিতে দলের অন্যতম সেরা মুখ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে (Priyanka Gandhi) আঁকড়ে ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে যে রাজ্যটিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, সেই পাঞ্জাবেও কার্যত নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে হাত শিবির। ইতিহাসে প্রথমবার কংগ্রেসের ভোট নেমে আসছে ২৫ শতাংশের নিচে। চুরাশির শিখ দাঙ্গার পরেও এত খারাপ ফল সে রাজ্যে হয়নি হাত শিবিরের। জন্মলগ্ন থেকেই উত্তরাখণ্ড প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর সরকার বদলের রীতি চলে আসছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর নেতৃত্বের অপদার্থতায় সেই উত্তরাখণ্ডেও বিজেপিকে টলাতে পারলেন না হরিশ রাওয়াতরা। গোয়ায় চিদম্বরমের কাঁধে ভর করে এবছর লড়াই দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল হাত শিবির। সৈকত রাজ্যে সরকার গড়া নিয়ে কংগ্রেস এতটাই নিশ্চিত ছিল যে ফলপ্রকাশের আগেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে নিয়েছিল হাত শিবির। ফলাফলে দেখা গেল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারেকাছে তারা নেই। বরং, স্থানীয় এবং ছোটদলগুলি ধীরে ধীরে বিরোধী পরিসরে থাবা বসাচ্ছে। একই ছবি মণিপুরেও। মোট কথা দিনের শেষে হাত শিবিরের হাতে রইল শুধু লবডঙ্কা।
একসময় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত রাজত্ব করা কংগ্রেস এখন একক শক্তিতে ক্ষমতায় মাত্র দুটি রাজ্যে। আর গোটা তিনেক রাজ্যে স্থানীয় দলগুলির লেজুড় হয়ে নিজেদের ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক দিন আগে থেকেই বলে আসছেন যেখানে বিজেপির (BJP) সঙ্গে সরাসরি লড়াই কংগ্রেসের, সেখানেই জিতছে বিজেপি। তৃণমূল নেত্রীর সেই তত্ত্ব এদিনের ফলাফলে আরও একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। ২০১৪ থেকেই সেটা হচ্ছে। কিন্তু এবারের ফলাফল কংগ্রেসের জন্য আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আজকের ফলাফল বলছে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই তো দূরঅস্ত স্থানীয় ক্ষুদ্র এবং আঞ্চলিক শক্তির কাছেও পদানত হচ্ছে হাত শিবির। কৃষি আইনের দরুন পাঞ্জাবে বিজেপির প্রতি চরম বিতৃষ্ণা ছিল জনমানসে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল বিজেপির বিকল্প হিসাবে পাঞ্জাবের মানুষ কংগ্রেসের থেকে আপকেই শ্রেয় বলে মনে করেছেন। ফলাফল ভাল করে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে উত্তরাখণ্ড বা গোয়ার মতো রাজ্যে সরকারের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণা থাকলেও কংগ্রেসকে ভরসা করতে পারেননি বিজেপি বিরোধী ভোটাররা। সেখানেই তৃণমূল, আম আদমি পার্টির মতো দল নিজেদের জন্য পরিসর তৈরি করে নিয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে যদি এভাবে আঞ্চলিক দলগুলি বা তৃতীয় কোনও শক্তিকে মানুষ বিজেপির বিকল্প হিসাবে ভাবা শুরু করে, তাহলে কংগ্রেসের জন্য সত্যিই আগামী দিনে অস্তিত্বের সংকট অপেক্ষা করে আছে।
এখন প্রশ্ন হল শতাব্দীপ্রাচীন দলের এই ব্যর্থতার দায় কার? বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের জনরোষ ছিল না, সেটা বলা যাবে না। কৃষি আইন, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো হাতেগরম ইস্যুও ছিল। তাহলে কেন তা কাজে লাগানো গেল না? কংগ্রেসে নেতারা বলাবলি করছেন, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় স্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতা ডুবিয়ে দিল দলকে। কিন্তু বাস্তব বলছে, যত দিন যাচ্ছে বিজেপি বিরোধী ভোটারদের ভরসাও হারিয়ে ফেলছে কংগ্রেস। গান্ধী পরিবারের প্রতি একটা সময় পর্যন্ত যে অগাধ ভরসা কংগ্রেসিদের ছিল, তাতেও চিড় ধরেছে। সেই সঙ্গে দলের চিরন্তন গোষ্ঠীকোন্দল তো আছেই। রাহুল (Rahul Gandhi), সোনিয়াদের (Sonia Gandhi) ব্যর্থতার পর কেউ কেউ আবার প্রিয়াঙ্কাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শুধু ভাবমূর্তি দেখিয়ে ভোটে জেতার দিন শেষ। আর গান্ধীদের দেখিয়ে তো সেটা সম্ভবই নয়। কংগ্রেস যত তাড়াতাড়ি সেটা বুঝবে ততই মঙ্গল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.