Advertisement
Advertisement

পরাধীন ভারতে স্কুল তৈরি পূর্বসূরির, স্বাধীন দেশে ঠাঁই নেই গোটা পরিবারের

রাতারাতি রাষ্ট্রহীন হওয়াই কি ছিল নিয়তি!

Assam Tragedy: Ancestor established school, name of family members go missing in NRC
Published by: Saroj Darbar
  • Posted:July 31, 2018 12:53 pm
  • Updated:August 1, 2018 4:01 pm  

মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: বঞ্চনা না নিয়তির পরিহাস!

বুঝে উঠতে পারছেন না বরপাথার গ্রামের দেব পরিবারের সদস্যরা। ঘর আছে, গ্রাম আছে। তাঁদেরই পূর্বসূরিদের তৈরি করা স্কুলে আজও খেলে বেড়াচ্ছে কচিকাঁচারা। তাঁদের চা-বাগানে আগের মতোই কাজ করছেন প্রায় তিনশো জন শ্রমিক। আছে সবই, নেই শুধু রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। রাতারাতি তাঁদেরও মাথায় ঝুলছে রাষ্ট্রহীন হওয়ার আতঙ্ক। নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম নেই দেব পরিবারের একজনেরও। অথচ ১৯৭১ তো কোন ছাড়, এ ভূমিতে তাঁদের পা পড়েছিল সেই ১৮৯৭ সালে।

Advertisement
পূর্বসূরির তৈরি স্কুল।

কী ছিল তখন এখানে? নেহাতই জঙ্গল। পূর্বসূরিদের কথা বলতে গিয়ে আবেগে গলা বুজে আসে দেব পরিবারের বর্তমান সদস্যদের। স্বাধীনতার বহু আগেই বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল থেকে চলে এসেছিলেন দুই ভাই-বিষ্ণুচরণ দেব ও মাধবচন্দ্র দেব। করিমগঞ্জ থেকে শিলচর হয়ে চলে আসেন বর্তমান শিবসাগর জেলায়। তখন চারদিক জুড়ে শুধুই জঙ্গল। আর কোম্পানির ফৌজের ঘোরাঘুরি। দুই ভাই সেনাদের আনাজপাতি সরবরাহ করার ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা মন্দ হত না। তবে জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় তো আর একা একা বাস করা যায় না। বাংলাদেশ থেকে নিজেদের পরিচিত কয়েকশো ঘর তখন তাঁদের ডাকে চলে আসে এপারে। তাদের নিয়েই দুই ভাই আস্ত একটি গ্রামের পত্তন করেন। সেই বরপাথার গ্রামে ক্রমে ক্রমে একটি চা-বাগানও তৈরি ফেলেন দুই ভাই। যে বাগান আজও তিনশো শ্রমিকের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। গ্রাম যখন আছে, তখন শিক্ষারও দরকার। ১৯৩১ সাল নাগাদ ওই গ্রামেই দুটি স্কুল তৈরি করেন তাঁরা। ১৯৩৮ সালে সে স্কুল সরকারি স্বীকৃতিও পায়। আজও বাচ্চাদের কলরোলে মুখরিত স্কুল চত্বর। এদিকে এর মধ্যে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। তবে উত্তরসূরিরা সে লিগ্যাসি বহন করে চলেছেন। নিজেদেরকে কখনওই ছিন্নমূল বলে মনে করেন না তাঁরা। বরং ভারতেরই নাগরিক- এই বোধ লালন করেই বড় হয়েছেন। ফলে দেশের হয়ে কাজ করতেও দ্বিধা করেননি। সমাজের মঙ্গলের জন্য তৈরি করেছেন রামকৃষ্ণ মিশন। সেখান থেকেই সমাজসেবামূলক নানা কাজ করা হয়। দেশ ও দশের উন্নতিই এতদিন মন্ত্র ছিল দেব পরিবারের। তবে আজ ভাবতে হচ্ছে নিজেদের কথা। ভয় হচ্ছে, মাথার উপর ছাদটুকু থাকবে তো! নাকি স্বাধীনতার আগে থেকে যে দেশে বাস, সে দেশই এক তালিকার জোরে পরভূমি হয়ে যাবে!

‘বাঙালি খেদাও’ রুখতে পদক্ষেপ মমতার, আজ বৈঠক রাজনাথের সঙ্গে ]

গোটা অসমে যাঁদের ‘ভূমিপুত্র’ বলা হচ্ছে, এঁরাও তাদের থেকে কম কিছু নন। নাগরিকপঞ্জির প্রথম তালিকাতে নামও ছিল পরিবারের সকলের। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় দেখা গিয়েছে একজনেরও নাম নেই। কেন এই পরিণতি? উত্তর নেই দেব পরিবারের কাছে। পরিবারের সদস্য বিভাসচন্দ্র দেব অরুণাচল সরকারের বনদপ্তরে কাজও করেছেন। সরকারি চাকুরে হওয়া সত্ত্বেও এনআরসিতে নাম নেই। স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ বিভাসবাবু জানাচ্ছেন, “বিজেপি নির্বাচনের আগে বলেছিল ভূমিপুত্রদের সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা ১০০ কিংবা ১৫০ বছর আগে এদেশে এসেছিলেন, তাঁদেরও অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু কোথায় কী!” তাঁর অভিযোগ, এখানে যাঁদের সম্পত্তি আছে তাঁদেরও চক্রান্ত করে এনআরসি তালিকায় টার্গেট করা হচ্ছে।

এই সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেই শুরু হয়েছিল সমাজসেবার কাজ।

নিজেদের কী হবে তা জানেন না। ৭ আগস্ট থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভেরিফিকেশনের সুযোগ আছে। যদি এনআরসি মেনে নেয় তবে ভারতেই থাকতে পারবেন। নইলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তবে দেব পরিবারের চিন্তা অন্য। ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে চা-বাগানের শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। অথচ সে দায়িত্ব তো তাঁদেরই। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন তো! শ্রমিকদের মুখে শেষদিন পর্যন্ত অন্ন তুলে দিতে পারবেন তো! নিজেদের চরম দুরাবস্থার দিনেও সকলের জন্যই ভাবছেন বিভাসবাবুরা। নিজেদের খারাপ দিনে বাকিদের কথা চিন্তা করার মানসিক জোর কোথায় পাচ্ছেন? গত ২৪ ঘণ্টায় আতঙ্কে-উদ্বেগে ক্লান্ত বিভাসবাবুদের বক্তব্য, কোনওদিন তো নিজেদের পর মনে করিনি। রাতারাতি সকলকে ছেড়ে শুধু নিজেদের কথা ভাবব কী করে!      

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement