Advertisement
Advertisement

Breaking News

কালাপানির ইতিহাস অতীত, নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই বাহাদুর গাঁওবুড়ার পরিবারের

ন্যূনতম শ্রদ্ধাও কি পাওনা ছিল না স্বাধীনতা সংগ্রামীর?

Assam NRC: Ancestors of Bahadur Gaon Bura excluded from list
Published by: Saroj Darbar
  • Posted:August 3, 2018 5:10 pm
  • Updated:August 3, 2018 5:10 pm  

মণিশংকর চৌধুরি, শিলচর: ব্রিটিশ পাঠিয়েছিল কালাপানিতে। আর মোদি সরকার কলমের এক খোঁচায় করে দিল বিদেশি।

বাহাদুর গাঁওবুড়া। শুধু এই নামটুকুই যথেষ্ট। আজও এই নাম উচ্চারিত হলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে আপামর অসমবাসীর। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসমের যে অবদান, তার পুরোধাপুরুষ এই বাহাদুর গাঁওবুড়া। সেই সিপাহী বিদ্রোহের সময় গণ অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। সেদিন ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কালাপানিতে পাঠিয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বুঁদ বাহাদুর অবশ্য কখনও ভাবেননি, তাঁরই মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে একদিন তাঁর উত্তরপুরুষদের বিদেশি প্রতিপন্ন হতে হবে।

Advertisement

কিন্তু বাস্তব এমনটাই। এনআরসি-তে নাম আসেনি বাহাদুর গাঁওবুড়ার পরিবারের একজন সদস্যেরও। জোরহাট জেলার তিতাগড়ে আজও বাস করেন বাহাদুরের উত্তরপুরুষরা। জোরহাটে তো বটেই, অসমের ইতিউতি আছে স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রস্তরমূর্তি। অথচ তাঁদের উত্তরপুরুষদের নাম নেই নাগরিকপঞ্জির খসড়ায়।

গলদের চূড়ান্ত, ২০০ চিহ্নিত বিদেশির নামও ঢুকল নাগরিকপঞ্জিতে ]

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের আগুন তখন ক্রমশ ছড়াচ্ছে। সে আঁচ গিয়ে পড়েছিল অসমেও। শেষ আহম রাজা (স্বর্গদেও) কন্দর্পেশ্বর সিংহ তখন মসনদে। তবে তিনিও বুঝতে পারছেন রাজা-রাজড়ার দিন ফুরোচ্ছে। এক অভূতপূর্ব স্ফূরণে জেগে উঠছে গোটা দেশ। সে সময়ই আন্দোলন সংগঠিত করতে এগিয়ে আসেন অসমের স্বাধীনতা সংগ্রামী মণিরাম দেওয়ান। তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রাজা কন্দর্পেশ্বর। অন্যদিকে এগিয়ে আসেন বৈষ্ণবরাও। বলা বাহুল্য শুধু ধর্ম নয়, মহাপ্রভুর সমাজ সংস্কারের ভূমিকার কথা বৈষ্ণবরা কখনও বিস্মৃত হননি। দেশের প্রয়োজনে সত্রাধিকারীরা এগিয়ে আসেন এই আন্দোলনে অংশ নিতে। তাঁরাই মূলত বাহাদুর গাঁওবুড়াকে আপন করে নেন। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ব্রিটিশ ফৌজের বিদ্রোহী সিপাহীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। সেখানে অস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে বৈপ্লবিক কাজে মণিরামের ডানহাত ছিলেন বাহাদুর। তাঁর আসল নাম যে বাহাদিল শেখ সে পরিচয় তখন ছিল গৌণ। বৈষ্ণবরা তাঁকে দেশের সৈনিক হিসেবেই দেখতেন। যেমন দেখতেন মণিরাম। সিপাহী বিদ্রোহের আগুন গোটা দেশে জ্বলে ওঠে। ব্রিটিশরা তা দমনও করে। মণিরাম দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে জোরহাটেই ফাঁসি দেওয়া হয়। আর বাহাদুর গাঁওবুড়ার হয় কালাপানির সাজা। সেই সংগ্রামের অতীত আজও অসমবাসীর স্মৃতিতে জেগে ওঠে। বাহাদুরের নাম উচ্চারণেই যেন বেজে ওঠে বিদ্রোহের দামামা।

কিন্তু সংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করেও আজ অসম সরকারের বিবেচনায় তাঁরা বিদেশি। যাঁদের পূর্বপুরুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে গোটা দেশ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তাঁদের উত্তরপুরুষকে ভারতীয় হিসেবেই স্বীকার করতে নারাজ দেশের তথাকথিত বৈধ নাগরিকদের নাগরিকপঞ্জি।

ছিল ভূমিপুত্র হল বাংলাদেশি, এনআরসি কেবল ভুলে ভরা! ]

কেন এই বিপত্তি? উত্তর নেই বাহাদুর গাঁওবুড়ার উত্তরপুরুষ আনসারউদ্দিনের কাছে। পূর্বপুরুষের স্ট্যাচুর সামনে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু বলছেন, “জীবনে আর কোনও ঘটনায় এরকম মর্মাহত হইনি। নিজেরই লজ্জা লাগছে।” লজ্জায় মুখ নামিয়েছেন জোরহাটের বাসিন্দারা। বাহাদুর গাঁওবুড়াকে প্রায় ভগবানের মতোই সকলে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের যে এমন পরিণতি হবে কেউ ভেবেও উঠতে পারেননি। জানা যাচ্ছে, পরিচয়পত্র হিসেবে যে নথি জমা দিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা, তা এনআরসি আধিকারিকদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি। যে বাহাদুর গাঁওবুড়াকে এক ডাকে গোটা রাজ্য চেনে, তাঁর উত্তরপুরুষদের বৈধতা প্রমাণে কী পরিচয়পত্রই বা দেখাতে হবে? প্রশ্ন জোরহাটের বহু বাসিন্দারাই। অনেকেই একে শুধু বাহাদুরের পরিবার নয়, গোটা জোড়হাটের অপমান হিসেবে দেখছেন। নাগরিকপঞ্জির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। গাফিলতি ও বিভ্রান্ত যে হয়েছে তার ভূরিভূরি নির্দশনও মিলেছে। কিন্তু যে মানুষটা কালাপানিতে গেলেন, ব্রিটিশদের নির্মম অত্যাচার সহ্য করলেন দেশের জন্য, তাঁর নাম জেনেও কি তাঁকে ন্যূনতম সম্মান দেখানো গেল না? নাকি এখানে কাজ করল জাতিবিদ্বেষের সমীকরণ? ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের চোখেমুখে প্রশ্ন। কিন্তু আপাতত কোথাও কোনও উত্তর নেই। জোরহাটের রাস্তায় আক্ষরিক অর্থেই স্থির মূর্তি হয়ে শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাহাদুর গাঁওবুড়া। ব্রহ্মপুত্রের তীরে তখন নাগরিকপঞ্জির নির্মম আর ভুয়ো বিধানের সামনে লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement