মণিশঙ্কর চৌধুরি: বৃহস্পতিবার রাতে অসমের তিনসুকিয়া জেলার ধোলা-খেরোনিবাড়ি এলাকায় পাঁচজন বাঙালি যুবককে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন উলফা (আই)। উলফা আই অর্থাৎ ইন্ডিপেনডেন্ট স্বাধীন উলফা জঙ্গি গোষ্ঠী। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম (উলফা)-র এই গোষ্ঠীটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেতা পরেশ বড়ুয়ার অনুগত। বর্ষীয়ান মোস্ট ওয়ান্টেড উলফা জঙ্গি নেতা পরেশ বড়ুয়া এখন বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়ে আছে। উলফা (আই) ভারত সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনার বিরুদ্ধে। এরা স্বাধীন অসম রাষ্ট্রের দাবিদার। এরা চায় অসম থেকে হিন্দু বাঙালিদের বিতাড়ন।
এই ঘটনায় রাতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে তিনি জানান, নিহতরা হল তিনসুকিয়ার বাসিন্দা। এঁদের নাম শ্যামল বিশ্বাস, অনন্ত বিশ্বাস, অবিনাশ বিশ্বাস, সুবোধ দাস এবং ধনঞ্জয় নমঃশূদ্র। মমতা বলেন, “অসম থেকে ভয়াবহ ঘটনার খবর পেলাম। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। শোক প্রকাশের ভাষা নেই। দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। আমার প্রশ্ন, এটা কি নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিণাম?” তিনি জানান, আজ রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করবে তৃণমূল। দুপুর ১টায় যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল করবেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং টেলিফোন করেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালকে। রাজনাথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, “নিন্দনীয় ঘটনা। অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। দ্রুত অপরাধীদের ধরতে বলেছি।”
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ন’টা নাগাদ খেরোনিবাড়ি গ্রামে একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন বাঙালি যুবক। হঠাৎই জিপে চড়ে সেখানে হাজির হয় মুখ ঢাকা ও জলপাই রঙের সেনার পোশাক পরা কয়েকজন সশস্ত্র উলফা জঙ্গি। তারা ছয় বাঙালি যুবককে সেখান থেকে অপহরণ করে। নিয়ে যায় কয়েক কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্রের চরে। নদীর চরেই ছয় যুবককে সামনে থেকে মাথার মাঝখানে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের। এরমধ্যে তিনজন একই পরিবারের সদস্য। একজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি। ঘটনার জেরে অসম জুড়ে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে। রাজ্যজুড়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সোনওয়াল হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, এই ঘটনা কাপুরুষোচিত। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে সবরকম চেষ্টা করবে সরকার। কাউকে ছাড়া হবে না।
রাজ্যে শান্তি বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা রুখবে সরকার। অসম পুলিশে ডিজি কুলধর শইকিয়া বলেছেন, পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল পৌঁছে গিয়েছে সেনা ও পুলিশ। হামলার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন অসমের কংগ্রেস নেত্রী, সাংসদ সুস্মিতা দেব। তিনি বলেছেন, “আশা করব নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়কে নিশানা করছে না জঙ্গিরা।” এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ তিনসুকিয়ায় বনধের ডাক দিয়েছে অসমের একটি বাঙালি ছাত্র সংগঠন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.