Advertisement
Advertisement

Breaking News

যন্ত্রণার স্বাধীনতা দিবস, বিচারের আশায় দিন গুনছে অসমের ১৩টি পরিবার

জানেন, কী হয়েছিল সেদিন?

As nation celebrates I-Day, 12 families in Assam await justice
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 15, 2017 12:04 pm
  • Updated:August 15, 2017 12:04 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০৪ সালের ১৫ই আগস্ট। ধেমাজি কলেজের মাঠে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে খুদে পড়ুয়ারা। বাজছে দেশাত্মবোধক গান।ব্যস্ততার অন্ত নেই শিক্ষকদের। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আনন্দে মাতোয়ারা সকলেই। নানা রঙের সাজে ১০ থেকে ১২ বছরের খুদে শিশুরা যেন এক একটি ফুল। অবশেষে এল পতাকা উত্তোলনের সময়। এগিয়ে এলেন এক শিক্ষক। কিন্তু পতাকার দড়িতে টান পড়তেই প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল চারিদিক। মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল নিষ্পাপ শিশুদের দেহ।লহমায় বদলে গেল পরিস্থিতি। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দে পড়ল মৃত্যুর করাল ছায়া। অসমের ধেমাজিতে ঘটা ওই ঘটনায় সেদিন প্রাণ হারায় ১০টি শিশু-সহ ১৩ জন নিরীহ মানুষ। তারপর থেকেই এদিনটি এলেই যন্ত্রণা যেন আরও বেড়ে উঠে নিহতদের পরিবারবর্গের।

[স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে মুখ্যমন্ত্রী, দেখা মিলল ‘কন্যাশ্রী’ ট্যাবলোর]

Advertisement

যথারীতি সেদিন স্বাধীনতা দিবস বয়কট করার ফতোয়া জারি করেছিল অসমের জঙ্গিসংগঠন উলফা ( ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম)। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি জনতা। বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ওই খুদে শিশুরাও। আর তাই বোধহয় তাদের দিতে হয়েছিল চরম মূল্য। দেশের স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় শহিদ হতে  হয়েছিল তাদেরও। সেদিন সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে ‘বুদ্ধিজীবী’ ও সরকারি মহলে দারুণ শোরগোল হলেও আজও বিচার পায়নি নিহতদের পরিবার। শোকগ্রস্ত পরিজনরা জানাচ্ছেন, এখনও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশুদের হত্যাকারীরা। ওই বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিল জঙ্গিসংগঠন উলফা। প্রাথমিকভাবে দায় স্বীকার না করলেও প্রায় ৫ বছর পর নিজের ঘৃণ্য কাজের কথা স্বীকার করে অসমবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সংগঠনটি। তবে ‘হোনর ওখম, স্বাধীন ওখম’-এর (সোনার অসম, স্বাধীন অসম) জিগির তুলে তারা যে নারকীয় হত্যালীলা চালিয়েছিল তা কোনওভাবে ক্ষমা করতে পারেনি অসমবাসী।

সেদিনের বিস্ফোরণে ১১ বছরের ছেলে সিদ্ধার্থকে হারিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষক রাজকুমার তাইদ। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন যে, প্রতিবছর  ১৫ আগস্টের দিনটি ফের জাগিয়ে তোলে সেই যন্ত্রণা। উলফার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল তাঁর ছেলে। তবে  তাঁর ছেলে যে দেশের জন্য শহিদ হয়েছে,  সে কারণে তিনি গর্বিত। একই কথা ৬৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী পদ্মেশ্বর বুড়াগোহাঁইয়েরও। সেদিন মেয়ে মানসীর ছিন্নভিন্ন দেহ বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। চোখে জল নিয়ে তিনিও জানিয়েছেন, মেয়ে বেঁচে থাকলে আজ ২৮ বছর বয়স হত। বড় ইচ্ছে ছিল মেয়ের বিয়ে দেওয়ার। তা আর হল না। বুকে স্মৃতি ও বেদনা নিয়ে এমন অনেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন সুবিচারের। প্রতিবছরের মতো এবছরও ১৬ আগস্ট  অসমে পালিত হবে শোক দিবস। প্রতিবার তাঁরা আশা করেন, এবার অন্তত দোষীদের শাস্তি হবে। আর প্রতিবারই ফিরতে হয় খালি হাতে।প্রশ্ন ওঠে সরকারের দায়-দায়িত্ব নিয়েও। আজও বুক ফুলিয়ে ‘শান্তি আলোচনা’ চালানোর নাম করে বহাল তবিয়তে অসমেই রয়েছে উলফা নেতা অরবিন্দ রাজখোওয়া। মূলস্রোতে ফিরে আসার যুক্তি দিয়ে কি পার পেয়ে যাবে সন্ত্রাসবাদীরা? প্রতিবারের মতো এবারও ঘোরাফেরা করছে এ প্রশ্নই।

[স্বাধীনতার উৎসবে নিখাদ ভারতীয় সাজে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত]

ওই ঘটনায় আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নিরুত্তর অসম পুলিশের ডিজিপি মুকেশ সহায়। মাত্র ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায় সেরেছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর কংগ্রেস সরকার। যদিও আজ পর্যন্ত সরকার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন নিহতদের পরিবার। যাই হোক না কেন, ইতিমধ্যে বিভক্ত হয়েছে উলফা। উলফা (স্বাধীন বা পরেশপন্থী) নাম নিয়ে আজও নিজেদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিসংগঠনটি। যথারীতি স্বাধীনতা দিবস বয়কটের ডাক দিয়েছে তারা। কেন্দ্রের সঙ্গে ‘আলোচনার’ নামে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে একাংশের ‘আত্মসমর্পণকারী’ জঙ্গিরা। আর এসব কিছুর মধ্যে আজও বিচারের আশায় দিন গুনছেন সন্তানহারা পিতা মাতা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement