নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: আজই সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানার শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তাই আয়করে ছাড় মিলবে? নজর জেটলির বাজেটে।
বাজেটে কী হতে চলেছে তা নিয়ে মানুষের মনে কৌতূহল তুঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, সামনে ভোট থাকলেও বাজেট জনমোহিনী হবে না। জিএসটি পরবর্তী জমানায় পণ্যের দাম-বাড়া কমার কোনও বিষয় থাকছে না। তবু বাজেটকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে নানা প্রত্যাশা থাকেই। বিশেষত আয়কর ও কর্পোরেট কর নিয়ে। কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরা। আয়কর ছাড়ের ক্ষেত্রে সরকার নতুন কোনও সুবিধা দেয় কি না, সে নিয়েই তাঁদের প্রধান আগ্রহ। দিনকয়েক আগে জেটলি এই ধরনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।
আয়কর আইনে বেশ কিছু কর ছাড় পান আয়করদাতারা। জল্পনা যে, করমুক্ত আয়ের ঊর্ধ্বসীমা বর্তমান আড়াই লক্ষ থেকে বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করতে পারে মোদি সরকার। পিএফ, ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে করছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ১.৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হতে পারে। তুলে দেওয়া হতে পারে ডিভিডেন্ট ডিসট্রিবিউশন ট্যাক্স। ফিরতে পারে স্টান্ডার্ড ডিডাকশন পদ্ধতি। হরেক রকমের কর ছাড়ের বদলে একরকম ছাড় চালু করা হলে আয়করের বোঝা অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৬-০৭ সালে এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া হয়। আয়করের স্ল্যাবও পরিবর্তন হতে পারে। মহিলাদের জন্য আয়করে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। কারণ সাম্প্রতিককালে মোদি সরকারের তরফে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে জোর গলায় সওয়াল করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার ক্ষেত্রেও মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মহিলাদের উদ্দেশে সমীক্ষার বইটির রং গোলাপি করা হয়েছে। আর্থিকভাবে সবল না হলে মহিলাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব নয় বলেই অনেকে মনে করেন। কর্পোরেট কর ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।
বাজেট কেমন হবে, সেকথা কয়েক ঘণ্টা পর জানা গেলেও এবার যে গ্রামীণ ভারত ও কৃষিক্ষেত্রের উপর জোর দেওয়া হবে তা একপ্রকার নিশ্চিত। সোমবার সংসদে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণে দেশের কৃষি ও কৃষিক্ষেত্রের কথা যেভাবে উঠে এসেছে, তার প্রতিফলন বাজেটে পড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেকদিন আগেই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলেছিলেন। তাই বাজেটে সে বিষয়ে ‘সঞ্জীবনী সুধা’র ব্যবস্থা থাকতে পারে। কৃষিবিমা, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মতো বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সরকার বরাদ্দ বৃদ্ধি করে কৃষকদের সদর্থক বার্তা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাজেটে স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। জোর দেওয়া হতে পারে পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও। শুল্কর ক্ষেত্রে নতুন পদক্ষেপ করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের উপর শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশি মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। পেট্রোল-ডিজেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক কমতে পারে বলেও মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের মূল্য ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী। এই গতিতে রাশ টানতে এক্সাইজ ডিউটিতে কাটছাঁট করতে পারে কেন্দ্র।
সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান। সেই চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কীভাবে সামলান তা দেখতে সকলেই মুখিয়ে রয়েছেন। বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। সেই লক্ষ্যমাত্রা সরকার যে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তা সকলেরই জানা। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এই সমস্যা অবিলম্বে সমাধান করতে হবে বলে নীতি আয়োগের বৈঠকে দেশ-বিদেশের তাবড় অর্থনীতিবিদরা জানুয়ারিতেই সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। রেল, সড়ক পরিবহণ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল বরাদ্দ করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির চেষ্টা বাজেটে হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। এর পিছনে যথেষ্ট রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনেই কয়েক কোটি নতুন ভোটার প্রথমবার ভোট দেবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষায় ‘মিলেনিয়াম ভোটার’। তাঁদের মন জয় করতে কর্মসংস্থান ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলিতে সরকারকে কিছু সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত। পাশাপাশি, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রে গতি আনার লক্ষ্যেও সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে পারে বলে আশা করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.