সাধারণত কোনও ধারা বিলুপ্ত করতে হলে সংসদে দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন দরকার৷
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আভাস মিলেছিল সপ্তাহখানেক আগে থেকেই। অমরনাথ যাত্রা বাতিল করা এবং কাশ্মীরে বেনজিরভাবে ৩৮ হাজার অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো থেকেই আন্দাজ করা হচ্ছিল, উপত্যকার মাটিতে বড়সড় চমক আসছে কেন্দ্রের হাত ধরে। সেই আন্দাজ সত্যি করে কাশ্মীর নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাতিল করা হল সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের বলে কার্যত ঘুরপথেই সংবিধান সংশোধন করিয়ে নিল কেন্দ্র।
লোকসভায় বিপুল সমর্থন থাকলেও রাজ্যসভায় খাতায়কলমে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় বিজেপি। তাছাড়া সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হয় রাজ্যসভার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন। যা এই মুহূর্তে পাওয়া কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না বিজেপির পক্ষে। তা সত্ত্বেও সংবিধান সংশোধন করালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কীভাবে হল এমন অসাধ্যসাধন? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় একবছর৷ গতবছর জুন মাসে কার্যত অকস্মাৎ, কাশ্মীরের পিডিপি সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় বিজেপি। তখনই সংবিধান সংশোধনীর গোড়াপত্তন হয়ে গিয়েছিল। আসলে তখন থেকেই ঘুঁটি সাজিয়ে রাখছিলেন অমিত শাহ।
কারণ, তিনি জানতেন সংবিধানের ৩৭০ ধারা সংবিধানের স্থায়ী ধারা নয়। এটা একটা অস্থায়ী ধারা। যা সংবিধান সংশোধন করে আনা হয়। এই অস্থায়ী ধারা সরানোর জন্য সংসদে ভোটাভুটির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় যে রাজ্যের উপর এই ধারা লাগু হচ্ছে, সেই রাজ্যের বিধানসভার সম্মতি। বিধানসভায় বিল পাশ হয়ে গেলে সেই বিলে যদি রাষ্ট্রপতি সম্মতি দেন তাহলেই ধারা বিলুপ্ত হয়। অর্থাৎ, জম্মু কাশ্মীরে যে ৩৭০ ধারা লাগু ছিল, সেই ধারা সরানোর পক্ষে যদি কাশ্মীর বিধানসভা প্রস্তাব পাশ করে এবং সেই প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি সই করেন তাহলেই ধারাটি বাতিল করে দেওয়া যাবে। অমিত শাহও সেই সুযোগটিই নিলেন।
একবছর আগেই তিনি জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা ভেঙে দেন। জারি করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। ফলে জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার যাবতীয় ক্ষমতা এখন রাষ্ট্রপতির হাতেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংসদে প্রস্তাবটি পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রস্তাবটি পেশ হওয়ার কয়েক মিনিট পরেই তা পাশ হয়ে যায় রাষ্ট্রপতি সই করার ফলে। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, এই প্রস্তাব পাশের জন্য জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার যে সম্মতি প্রয়োজন ছিল, তা কেন নেওয়া হল না? প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দেন, জম্মু কাশ্মীরে এখন কোনও বিধানসভায় নেই, কাজেই কোনও সম্মতির প্রয়োজনই হয় না। ফলে স্রেফ রাষ্ট্রপতির সইয়ের জোরেই বিলুপ্ত হয় এই সংশোধনী। এখানে অবশ্য একটি আইনি পথ খোলা রয়েছে বিরোধীদের জন্য। তাদের দাবি, বিধানসভা যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা সরাসরি রাষ্ট্রপতি নিতে পারেন না। তাই এই সিদ্ধান্ত অবৈধ। এ নিয়ে আদালতে যাওয়ার রাস্তাও খোলা রয়েছে তাদের কাছে।
৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হলে কাশ্মীরে অশান্ত হতে পারে তাও আগে থেকেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেজন্যই মাস ছয়েক আগে থেকেই শুরু হয় ধরপাকড়। প্রথমে সক্রিয় করা হয় এনআইএ। সীমান্তের ওপারের সঙ্গে এপারের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিষ্ক্রিয় করা। কাশ্মীরের অধিকাংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এখন হয় জেলবন্দি না হয় গৃহবন্দি।
রবিবার রাতেই গৃহবন্দি করা হয় আবদুল্লা এবং মুফতিকে। সেইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবাও। ফলে নেতাদের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও উপায় রইল না। এর ফলে এই দুই রাজনৈতিক শক্তির যে সংগঠিত প্রতিবাদ গড়ে তোলার ক্ষমতা ছিল, তাও কার্যত নষ্ট করা হয়। এর ফলে যা হতে পারে তা নিতান্তই বিচ্ছিন্ন অশান্তি, যা সেনার পক্ষে দমন করাটা একেবারেই কঠিন কাজ নয়। কোনওভাবেই সংগঠিত প্রতিবাদ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.