সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাজার হাজার লাঠি। ধারাল অস্ত্র। পেট্রল বোমা। বন্দুক। অত্যাধুনিক রাইফেল। রাম রহিমের মূল ডেরায় অভিযান চালিয়ে চক্ষু চড়কগাছ সেনাকর্তা-প্রশাসনের। কী নেই সেখানে? ছোটখাটো সেনাবাহিনী যেন! ধর্মের আড়ালে ডেরার সদর দপ্তরে চলা এইরকম গতিবিধি সম্পর্কে প্রশাসন কি কিছুই জানত না, উঠছে প্রশ্ন। এই পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচা সওদার মূল ঘাঁটিতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুত, এমনকী অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১০-এই সতর্কবার্তা শুনিয়েছিল ‘মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স’।
[ভক্তির নামে হিংসা বরদাস্ত নয়, বেতারে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর]
জানা গিয়েছে, ওই বছরই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করেন ভারতীয় সেনার গোয়েন্দারা। সেখানে বলা হয়, ডেরার ঘাঁটিতে চলছে ব্যাপক অস্ত্র প্রশিক্ষণ। মজুত করা হয়েছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। শুধু তাই নয়, ওই কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন সেনার প্রাক্তন অফিসাররাও। তাঁরাই নাকি এই প্রশিক্ষণ দিতেন। সে বছরই সেনা-জওয়ানদের ডেরার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয় সেনার তরফে। অভিযোগ, রিপোর্ট পাওয়ার পরও এবিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য প্রশাসন। নামমাত্র তল্লাশি চালিয়ে ডেরাকে ‘ক্লিনচিট’ দেয় পুলিশ। সাত বছরের পুরনো সেই রিপোর্ট ফের প্রকাশ্যে আসায় খাট্টার প্রশাসনের পাশাপাশি আঙুল উঠতে শুরু করেছে পূর্বতন হুডা সরকরের বিরুদ্ধেও। অনেকেই মনে করছেন, সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে স্বঘোষিত ‘বাবা’ রাম রহিমের দহরম মহরম রয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী, গত শুক্রবারও ধর্ষণের দোষী সাব্যস্ত রাম রহিমকে জেলে নিয়ে গিয়ে জামাই-আদর করা হয়েছে বলে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশের অভিযোগ।
তবে এই ধর্ষক বাবা একা নয়। ২০১৪ আরেক স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালকে নিয়ে একটি মামলায় হরিয়ানা সরকারকে একটি নোটিস পাঠায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট। ডেরার মতোই ‘সতলোক’ আশ্রমের মধ্যেও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ দায়ের হয় আদালতে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, জানতে চায় আদালত। ওই মামলা চলাকালীন আরও একবার ডেরার আশ্রমে অস্ত্রশস্ত্র মজুত থাকার তথ্য। তবে এক্ষেত্রেও ২০১৫-য় ডেরাকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করে হরিয়ানা সরকার।
[রাম রহিমকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণে চাপ দেওয়া হচ্ছিল, কবুল প্রাক্তন সিবিআই কর্তার]
স্থানীয় সূত্রে খবর, ডেরা সাচা সওদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের প্রতিপত্তি ছিল প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে। কেন্দ্র ও রাজ্যের বহু মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী অনেকেই তার অনুগামী। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই আধিকারিক নারায়ণন। বয়ান বদলাতে তাঁকে বারবার চাপ দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করারও চেষ্টা হয়েছিল বলেও তাঁর দাবি। এভাবে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসায় ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে ধর্ষক গুরুর আরও কুকীর্তি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.