ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: আট মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি বড়সড় জঙ্গি হামলা৷ দুটিই সেনা ঘাঁটিতে৷ প্রথমে পাঠানকোট, এবার উরি৷ দুটি হামলাতে জঙ্গিদের রণনীতি ভিন্ন হলেও একটি বিষয়ে মিল আছে৷ সেটি হল, দুই ক্ষেত্রেই জঙ্গিরা ভারতীয় সেনার উর্দি পরে হামলা চালায়৷
ভারতীয় সেনার ইউনিফর্ম থাকায় সেনাঘাঁটির কড়া নিরাপত্তার বলয় পার করে অবাধে ঢুকে হামলা চালাতে সক্ষম হয় জঙ্গিরা৷ রবিবারের এই হামলা ফের একবার পাঠানকোটের হামলার থেকে উঠে আসা প্রশ্নটিকে উসকে দিল৷ ভারতীয় সেনার উর্দি কীভাবে গেল জঙ্গিদের হাতে? তবে তা কী কোনও কঠিন ব্যাপার! কারণ এদেশে টাকা দিলেই তো পাওয়া যায় সেনা জওয়ানের পোশাক৷ পাঞ্জাব, রাজস্থান অথবা পশ্চিমবঙ্গ, দেশের প্রায় প্রত্যেকটি রাজ্যেই অবাধে বিকোচ্ছে সেনা জওয়ানের পোশাক৷ টুপি থেকে বুট, দু’হাজার টাকায় পাওয়া পুরো ইউনিফর্মের সেট৷
যে দোকানে সেনা জওয়ানদের পোশাক তৈরি হয়, সেখানেই পাওয়া যায় গোটা ইউনিফর্ম৷ উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা মিটার দামের কাপড় পাওয়া যায়৷ সেই কাপড় যে কেউ কিনে নিয়ে যেতে পারেন৷ তা ছাড়াও ওই দোকানে আস্ত পোশাক তৈরি করে দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে৷ সেনার প্যান্ট তৈরি করতে খরচ ৬০০ টাকা৷ জামা তৈরি করতে লাগে ৭০০ টাকা৷ এছাড়া জামায় নেম প্লেট, সেনার লোগো বসাতে আলাদা আলাদা টাকা লাগে৷ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় পাওয়া যায় সেনা জওয়ানের জুতো৷ আর বাকি টুপি, বেল্ট এই সব নিয়ে প্রায় ৩০০ টাকা৷ মোট দুই হাজার টাকায় তৈরি পুরো ইউনিফর্ম৷
যদিও পাঠানকোটের ঘটনার পর কয়েকদিন সেনা পোশাক বিক্রি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়৷ তবে সময়ের সঙ্গে কমেছে নজরদারি আর ফের শুরু হয়ে গিয়েছে সেনার পোশাক বিক্রি৷ শুধু সেনার পোশাক তৈরির দোকানে নয়, বিভিন্ন বস্ত্র বিপণিতেও বিক্রি হচ্ছে সেনা পোশাকের কাপড়৷ নৈহাটি স্টেশন সংলগ্ন বাজারে একাধিক বস্ত্র বিপণিতে বিক্রি হচ্ছে এই কাপড়৷ সেই কাপড় কিনে পুরো পোশাক তৈরি করা কোনও কঠিন কাজ নয়৷ রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে এইভাবেই চলছে পোশাক বিক্রির ব্যবসা৷ এছাড়া কলকাতার বিভিন্ন দোকানেও একইভাবে বিক্রি হচ্ছে সেনা জওয়ানদের পোশাক৷ তবে শুধু এ রাজ্যে নয়, ভিন রাজ্যেও অবাধেই চলছে এই কাজ৷
রাজস্থানের জয়সলমেঢ়ে সোনার কেল্লা যাওয়ার পথে রাস্তার দুধারে সারি সারি দোকান আর সেখানে ঝুলছে আস্ত ইউনিফর্মের সেট৷ দাম কম-বেশি এ রাজ্যের মতোই৷
কয়েকমাস আগে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ এলাকায় এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ৷ অবাকভাবে সেই সন্দেহভাজনের কাছ থেকেও উদ্ধার হয় দুই জোড়া সেনা পোশাক৷ তদন্তে জানা যায়, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের পথে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল সে৷ তবে এই সন্দেহভাজনের কী অভিসন্ধি ছিল তা এখনও জানা যায়নি৷ বার-বার এই সেনা পোশাক পড়েই নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে ঢুকে পড়ছে জঙ্গিরা৷ তবে তা সত্ত্বেও হেলদোল নেই সরকারের৷ পাঠানকোট হামলার পর সেনা পোশাক সাধারণের কাছে বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও কার্যত সেই নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে বিক্রি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.