Advertisement
Advertisement

Breaking News

Wayanad

চোখের সামনে ডুবে গেল সেনার ট্রাক! ওয়ানড় যেন মৃত্যুপুরী

প্রকৃতির সৌন্দর্য মুহূর্তে কত বীভৎস রূপ নিতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

Army truck drowned in Wayanad amidst landslide
Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:July 30, 2024 6:46 pm
  • Updated:July 30, 2024 9:24 pm  

সুপর্ণা মজুমদার, ওয়ানড়: বৃষ্টি হবে সে পূর্বাভাস ছিল কিন্তু তা যে এত ভয়ংকর আকার নিতে পারে সে বিষয়ে কোনও ধারণাই ছিল না। ছুটিতে স্বামী-স্ত্রী মিলে ওয়ানড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা। উঠেছিলাম ‘মৃত্যুপুরী মেপ্পাদি’ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে স্টার্লিন ভৈতিথিতে এক হোটেলে। সবুজ অরণ্য-পাহাড় ঘেরা এই জায়গায় আমাদের রিসর্টের ঠিক পাশ থেকে বয়ে গিয়েছে কাবিনি নদীর একটি শাখা। জল সেখানে ছিল অল্পই, তবে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য মুহূর্তে কত বীভৎস রূপ নিতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

রবিবার দুই-এক পশলা বৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি খারাপ আকার নেয় সোমবার বেলার দিক থেকে। হোটেল থেকে কয়েক কিমি দূরে বনসুরা সাগর নামে একটি ড্যাম দেখতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বিকেলে ফেরার সময় কার্যত মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়। গাড়ি নিয়ে ওই অবস্থায় কোনওমতে রিসর্টে ফিরি। ফেরার সময় দেখি নিতান্ত নিরীহ কাবিনি খরস্রোতা ভয়ংকর আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি যে গুরুতর আকার নিচ্ছে অনুমান করে রিসর্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই। তাঁরা অবশ্য সেই সময় আশ্বস্ত করেন, চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু রাত সাড়ে নটা নাগাদ আবার বললাম, ‘জল বাড়ছে’। তখনও আশ্বস্ত বাক্য। আচমকা রাত ১টা নাগাদ ফোন এল হোটেলের ঘরে। রিসেপশন থেকে হিন্দিতে প্রশ্ন, ‘কটেজের বাইরে দেখুন তো কতটা জল জমেছে?’ জানালার পর্দা ফাঁক করে দেখেই শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। কটেজের চারপাশে তখন কাবিনির ঘোলা জল। সঙ্গে সঙ্গে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পাশের তুলনামূলক একটু উঁচু কটেজে আমাদের রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। অন্ধকারের মধ্যে কোমর পর্যন্ত জল ঠেলে যেতে হল সেখানে। সঙ্গে ভারী স্যুটকেশ। যেটা বয়ে নিয়ে গেলেন হোটেলের এক কর্মী। এদিকে তখন পার্কিংয়ে গাড়ির চাকা অবধি জল উঠতে শুরু করেছে। স্বামীকে যেতে হল সেই দিকে। ততক্ষণে জল তাঁর বুক পর্যন্ত উঠে এসেছে। গাড়িটা কোনওমতে তোলা হয় রাস্তার একটু উপরে। রিসর্টে ফেরার পথ তখন বন্ধ। কারণ জল ক্রমাগত উপরে উঠছে। পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার নিয়েছে যে নিচের রিসর্টের কাছে দ্রষ্টব্য হিসেবে সেনার একটি ট্রাক রাখা ছিল। পুরোপুরি জলের নিচে চলে যায় সেটি।

Advertisement
কাবিনি নদীর শাখা।

[আরও পড়ুন: ফের দুর্ঘটনার কবলে রেল, লাইনচ্যুত হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেসের ১৮টি বগি, মৃত অন্তত ২]

আমি তখন ২০৩ নম্বর কটেজের ঘরে একা একটা ব্যাগ নিয়ে। বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে। সামনে শুধুই জঙ্গল। সেই অবস্থায় রিসর্টের দুই কর্মীর সাহায্যে জঙ্গলের অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে কোনওমতে উঠে এলাম রাস্তায়। উঠে কিছুটা দূরে স্বামীকে দেখে তাঁর সাহায্যে ব্যাগ তুলে দিলাম গাড়িতে। নাগাড়ে বৃষ্টির মাঝেই কোনওমতে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিলাম। রেজিস এমকে নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাড়ির ভিতর আশ্রয় নিতে বললেন। আধা সেনায় চাকরি করার সুবাদে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে থাকায় জন্য তিনি কিছুটা বাংলা জানেন। শুধু আমরা নই, আমাদের পাশাপাশি আরও কয়েকজন পর্যটক আশ্রয় নেন ওই বাড়িতে। কোনওমতে সেখানে রাতটুকু কাটাই। সকালে উঠে জানতে পারি মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে কী ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

বান্দিপুর ফরেস্টের বর্তমান পরিস্থিতি।

[আরও পড়ুন: ওয়ানড় ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৩, উদ্ধারকাজে নামল নৌসেনা ও বায়ুসেনা]

বেলা বাড়ার পর জল কিছুটা নিচে নামলে গাড়ি নিয়ে কেরল ছেড়ে কর্নাটকের দিকে রওনা দিই আমরা। পথে সোশাল মিডিয়ার চোখ রাখতেই নজরে পড়ে ওয়ানড়ের ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা। যে দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মাটির নিচে চাপা পড়েছে আস্ত গ্রাম। ফেরার পথে নজরে পড়ে গত রাতের পাহাড়ে ভূমিধস চিহ্ন। দুর্ঘটনাস্থলের দিকে ছুটছে সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। চোখ বুজলে তখনও চোখের সামনে ভেসে উঠছে গত রাতের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। দাঁত নখ বের করা রুদ্র প্রকৃতির নাগাল থেকে এভাবে প্রাণ হাতে ফেরা নিতান্ত কপালজোর ছাড়া আর কিছু নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement