সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের যুদ্ধের হুমকি দিল চিন। ডোকলামে ভারতীয় সেনার অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে যে কোনও সময়ে ভারতের সঙ্গে বড়সড় সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে বুধবার জানাল চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস। সুর মিলিয়েছে চিনা বিদেশমন্ত্রকের মহিলা মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনলি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি। এক লিখিত জবাবে তিনি জানান, “১৯৬২-র যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী চিন সীমান্তে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরোপুরি তৈরি আছে। শত্রুরা কোনও ‘মিস অ্যাডভেঞ্চার’ করার দুঃসাহস দেখালেই তাদের কল্পনাতীত উপযুক্ত জবাব পাবে। ভারতীয় জওয়ানরা এখন ডোকলাম—সহ চিন সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি তৈরি রয়েছে। আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের সাহসী সৈনিকরা দেশকে নিরাপদ রাখতে যে কোনও শত্রুকে পরাস্ত করতে রীতিমতো সক্ষম। সেই শত্রুর চ্যালেঞ্জ পশ্চিম সীমান্ত থেকেই আসুক বা পূর্ব সীমান্ত থেকেই আসুক।”
উল্লেখ্য, এর আগে লোকসভায় এক বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছিলেন, “ডোকলাম মালভূমি ভুটানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে চিন বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করেছে এবং নিজের অধিকার দাবি করছে। ডোকলামের কাছে চিনা সেনারা যে সড়ক নির্মাণ করছে তা ভারত ও ভুটানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপদজনক। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সীমান্তের খুব কাছে চিনা সেনারা কোনও সড়ক বা সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ করতে পারে না। তা ছাড়া ভুটানের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষার জন্য ভারত দায়বদ্ধ। সেই তাগিদ থেকেই ডোকলামে চিনা সেনাদের অনুপ্রবেশে ভারত বাধা দেবেই। ওয়াং বেজিংয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের জানান, এখন ডোকলাম ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার কোনও যুক্তিই নেই। আলোচনায় গেলে চিনের মানুষ মনে করবেন চিন সরকার ভারতকে অযথা সমীহ করছে এবং সরকার দুর্বল বলে আপস করতে চাইছে। এই অবস্থায় নিঃশর্তভাবে ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, না হলে যে কোনও সময় সংঘর্ষ হতে পারে। সংঘর্ষ একবার শুরু হলে তা ডোকলামে থেকে ছড়িয়ে পড়বে কাশ্মীর থেকে অরুণাচল পর্যন্ত। চিনের বিদেশমন্ত্রকের দাবি, ডোকলামে ৫৩ জন ভারতীয় জওয়ান ও একটি বুলডোজার পর্যন্ত মোতায়েন রয়েছে।
#Himveers of #ITBP in security duty on #AmarnathYatra2017 route in Jammu and Kashmir pic.twitter.com/QxV7VW8g7H
— ITBP (@ITBP_official) July 20, 2017
চিনের সরকারি মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে সংঘর্ষ শুরু হলে তার জন্য দায়ী থাকবে ভারতই। ভারত যে যুক্তিতে ডোকলামে অনুপ্রবেশ করেছে, সেই একই যুক্তিতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মিও উত্তরাখণ্ড ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করতে পারে। ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা ওয়াশিংটনে বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে ভারত একটি প্রভাবশালী এবং জটিল হিমালয়-সংলগ্ন শক্তি। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকার বরাবরই আন্তর্জাতিক নিয়ম ও চুক্তি মেনে এসেছে। ভারত কখনও কোনও দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন দেখায়নি। এ ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে বিশ্বের সব দেশেরই কিছু না কিছু শেখার আছে।
Indo-Tibetan Border Police (#ITBP)…a film (1/2)#Himveer pic.twitter.com/4rDkyryVls
— ITBP (@ITBP_official) July 18, 2017
এদিকে এই ইস্যুতে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দলাই লামা জানিয়েছেন, চিন অযথা বাজার গরম করছে। ডোকলাম একটি তুচ্ছ ইস্যু। এটা অষ্টাদশ শতক নয়। একবিংশ শতকে জমি বিতর্কে যুদ্ধে যাওয়াটা বোকামি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করাটাই যুক্তিযুক্ত। যুদ্ধে একজন হারবে এবং পিছিয়ে যাবে, এই চিন্তা-ভাবনাটাই খুব বোকা বোকা। আধুনিক যুগে একটি দেশ অপর দেশের সার্বিক বিকাশের উপর পারস্পরিক নির্ভরশীল। প্রতিবেশীকে ধ্বংস মানে নিজেকেই ধ্বংস করা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.