সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছ’মাসে শৈলজা দ্বিবেদীর সঙ্গে ফোনে তিন হাজার ৫০০ বার কথা বলেছেন মেজর নিখিল হান্ডা। ধৃত সেনাকর্তার ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে এই তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রীমতী দ্বিবেদীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। একটি নিজের নামে রাখলেও অন্যটি ছিল ভুয়ো অ্যাকাউন্ট। ধৃতকে আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫-তে নিখিল হান্ডা শ্রীনগরে পোস্টিং ছিলেন। সেই সময়ই তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া শৈলজাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। একই সঙ্গে দুটো অ্যাকাউন্ট থেকে যায় রিকোয়েস্ট। ফেক অ্যাকাউন্টে নিজেকে দিল্লির ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন হান্ডা। এরপর প্রায় ছ’মাস তাঁদের মধ্যে আলাপচারিতা চলে। একটা সময় দেখা করার কথাও হয়। তখনই ফেক অ্যাকাউন্টটি যে তাঁরই, তা জানান মেজর। ইতিমধ্যে মীরাটে বদলির নির্দেশ আসে হান্ডার। সেখানকার সাকেত এলাকাতেই থাকেন হান্ডার পরিবার। এদিকে বাড়ির কাছে বদলির সুযোগ পেয়েও তা নেননি হান্ডা। উলটে অনুরোধ উপরোধ করে নাগাল্যান্ডে পোস্টিং নিয়ে নেন। সেখানেই ছিলেন মেজর অমিত দ্বিবেদী। হান্ডা পৌঁছালে তাঁর সঙ্গে শ্রীমতী দ্বিবেদীর দেখা হয়। একদিন স্বামী অমিত দ্বিবেদীর সঙ্গেও নিখিল হান্ডার আলাপ করিয়ে দেন তিনি। বাড়ির পার্টিতে আসার আমন্ত্রণও জানান তাঁকে। সেখানে থাকতে থাকতেই দু’জনের সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা বাড়ে। এমনকী, বিয়েরও প্রস্তাব দেন মেজর হান্ডা। তবে তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন শৈলজা। এতে দমে যাননি মেজর। একসময় বিরক্ত হয়েই তাঁকে ফোন করতে ও বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দেন শৈলজা। এরপর দিল্লিতে বদলি হয়ে চলে আসেন মেজর অমিত দ্বিবেদী। হান্ডা থেকে যান নাগাল্যান্ডেই। সেখান থেকে নিয়ম করে বারবার ফোন করতে থাকেন শৈলজাকে। একটা সময় মান ভাঙে। আবার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শৈলজার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি দিল্লির আরও তিন মহিলার সঙ্গেও মেজরের সম্পর্ক ছিল। ফেক অ্যাকাউন্ট থেকেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলা শুরু। তদন্তের স্বার্থে তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার রাতে মীরাটে আসেন মেজর। বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বচসাও হয়। তিনি যে শৈলজাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া তা জানতেন তাঁর স্ত্রী। সেই রাতেই শৈলজাকে ফোন করে পরের দিন দেখা করার বিষয়টি পাকা করেন। তখন স্বামীর সঙ্গে বাজারে ছিলেন শৈলজা। তাই কোনওরকম উচ্চবাচ্চ না করেই হ্যাঁ বলে দেন। পরের দিন সেনা হাসপাতালে ছেলেকে দেখার অজুহাতে দিল্লি আসেন হান্ডা। শ্রীমতী দ্বিবেদীও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান। মেজরের হন্ডাসিটিতে বিয়ে নিয়ে দু’জনের কথা কাটাকাটিও হয়। মেজরের কথায় সায় দেননি শৈলজা। তাতেই রেগে গিয়ে তাঁর গলায় ছুরি চালিয়ে দেন হান্ডা। তারপর গাড়ি থেকে ফেলে চাকায় পিষ্ট করে বেরিয়ে যান। পরে ফের হাসপাতালে ফেরেন। ততক্ষণে শৈলজাদেবী খুন হয়েছেন জানতে পেরেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে চলে এসেছেন মৃতের স্বামী। অমিত দ্বিবেদী গাড়িতে হান্ডাকে দেখে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে হান্ডা পালিয়ে যান। পরে জানান, ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু মীরাটে পালিয়ে গেলেও গাড়ির মধ্যে থাকা রক্তের দাগ নিশ্চিহ্ন করতে পারেননি। ধরা পড়ে যান। চালাকি করে শৈলজা ও নিজের ফোনের যাবতীয় চ্যাটিং অ্যাপ ও কললিস্ট মুছে ফেলেছিলেন হান্ডা। নিজের ফোনটি ভেঙে ডাস্টবিনে ফেলেও দেন। তবে তদন্তকারী অফিসাররা সেটি উদ্ধার করেছেন। ইতিমধ্যেই ফোন থেকে তথ্য উদ্ধারের পালা শুরু হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.